সাতক্ষীরার কলারোয়ায় একই পরিবারের ৪ জনকে একাই খুন করেছে নিহত শাহিনুরের ছোট ভাই রাহানুর। গ্রেপ্তারের পর এমন স্বীকারোক্তি দিয়েছে ঘাতক। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি ও তোয়ালে উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বিকালে সাতক্ষীরা সিআইডি অফিসে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, নিহত শাহিনুরের ছোট ভাই রাহানুর একাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। রাহানুরের বরাত দিয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক বলেন, রাহানুর বর্তমানে কোন কাজ করতো না। বিগত বেশ কিছুদিন তার কোন আয় ছিল না। একইসঙ্গে গত ৯-১০ মাস আগে তার বউ চলে যায়। এজন্য সে বড় ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে থেকে খাওয়া-দাওয়া করতো।
কিন্তু খাওয়া-দাওয়া নিয়ে তার ভাবী সাবিনা খাতুন তাকে গালমন্দ করতেন। এতে তার মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ জন্ম নেয়। এক পর্যায়ে সে ভাবীকে হত্যা করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়।
এজন্য সে ১৪ই অক্টোবর রাতে পাশের ফার্মেসি থেকে ঘুুমের ওষুধ ও স্থানীয় মুদি দোকান থেকে স্পিড (পানীয়) কিনে তাতে মিশিয়ে তার ভাবী ও ভাইপো ভাতিজিকে খেতে দেয়। রাতে রাহানুর তার বড় ভাই শাহিনুরের ঘরে টিভিতে আইপিএল খেলা দেখছিল। রাত দেড়টার দিকে বড়ভাই ঘের থেকে বাড়ি এসে দেখে রাহানুর তার ঘরে বসে টিভি দেখছে। এসময় বড় ভাই তাকে টিভি দেখার জন্য বকাঝকা করেন। বলেন, তুই বিদ্যুৎ বিল দিসনে, টিভি দেখছিস কেন। এ সময় রাহানুর ভাইকে বলে এ মাসের বিদ্যুৎ বিল আমি দিয়ে দেব তুমি এই স্পিডটি খাও। বড়ভাই তখন তার দেয়া স্পিডটি খায়।
এরপর রাতের কোন এক সময় সে ঘরের কার্নিস বেয়ে বড় ভাইয়ের ঘরের ছাদের ওঠে চিলে কোঠার দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে ঘুমন্ত অবস্থায় ভাইকে গলা কেটে হত্যা করে। পরে পাশের ঘরে থাকা ভাবীকেও একইভাবে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের সময় ভাবী চিৎকার দিলে ভাইপো-ভাতিজিও ওঠে যায়। তখন তাদেরও হত্যা করে রাহানুর। কথা বলতে পারে না বলে ৬ মাসের মারিয়াকে বাঁচিয়ে রাখে। পরে সে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতিটি বাড়ির পাশের বড় পুকুরে ফেলে দেয়।
অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক আরও বলেন, রাহানুরের দেয়া তথ্য মতে, তাকে সঙ্গে নিয়ে বুধবার পুকুর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি ও তোয়ালেটি উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ই অক্টোবর ভোর রাতে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলসি গ্রামে মৎস্য ঘের ব্যবসায়ী শাহিনুর রহমান, তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন, ছেলে মাহি ও মেয়ে তাসনিমকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। তবে, ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় তাদের ৬ মাস বয়সী শিশু কন্যা মারিয়া। ওইদিন শাহিনুরের শাশুড়ি ময়না খাতুন বাদী হয়ে কলারোয়া থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা (নং ১৪) দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সিআইডিকে। পরে এ ঘটনায় নিহত শাহিনুরের ভাই রাহানুরকে গ্রেপ্তার করে আদালতে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে সিআইডি। আদালত তার ৫দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
সূত্র: মানবজমিন
Leave a Reply