1. support@nongartv.com : Nongartv :
  2. regularmd@gmail.com : Suhag Rana : Suhag Rana
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৩ অপরাহ্ন

স্বাধীনতা এবং আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি- সাজন আহমদ সাজু

সাজন আহমদ সাজু
  • আপডেটের সময় রবিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২০

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযোদ্ধের মাধ্যমে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অভ্যুদয় নিঃসন্দেহে বাঙালি জাতির শ্রেষ্ট অর্জন।
আমাদের হাজার বছরের লালিত স্বপ্ন একটি মানচিত্র, একটি পতাকা, আমাদের স্বাধীনতা।
ত্রিশ কিংবা তার অধিক লাখো তাজা প্রাণ আর দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রম হারিয়ে অর্জিত হয়েছে এই স্বাধীনতা।
মাত্র ৯ মাসের যুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য অকাতরে এতো প্রাণ, এতো রক্ত বিশ্বের আর কোনো জাতিকে দিতে হয়নি।পরাধিনতার শৃঙ্খল মুক্ত হতে বাংলাদেশের মানুষের এই আত্মত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাসে নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের কাছে অনন্য দৃষ্টান্ত।
শোষণ-বঞ্চনা অন্যায়, অত্যাচারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের এ পথে আমাদের পূর্বপুরুষদের ভোগ করতে হয়েছে অমানুষিক নির্যাতন,লুন্ঠিত হয়েছে ঘরবাড়ি,হারাতে হয়েছে স্বজন।
২৫শে মার্চ কালোরাতে পাকিস্তানী হিংস্র দানবগুলো যখন ঘুমন্ত মানুষের উপর পশুর মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো তখন পাকিস্তানী হায়েনাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদটা আর প্রতিবাদে সীমাবদ্ধ থাকেনি, রুপ নেয় তীব্র প্রতিরোধে।
সেদিন থেকেই মূলত নিরস্ত্র, নিরীহ মানুষ স্বাধীনতা অর্জনের দৃপ্ত শপথ নিয়ে প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে বিজয়ের পথে সংগ্রাম শুরু করে।
২৫ শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্থানী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হলে রাজনৈতিক নেতৃত্বে শুণ্যতা সৃষ্টি হয়,শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হওয়ার খবর শুনে উনার সহচর, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অনেকটা হতভম্ব হয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় পড়ে যান,এদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রবল শক্তি নিয়ে পরিকল্পিত ভাবে বাঙালিদের উপর প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে নির্বিচারে মানুষ হত্যা শুরু করলে, রাজনীতিবিদ না হয়েও পেশাদার সৈনিক একজন মেজর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করে জাতিকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আহবান জানান।
২৭শে মার্চ সন্ধ্যায় তৎকালীন সেনাবাহিনীর এক চৌকস অফিসার মেজর জিয়াউর রহমান সাহসী পদক্ষেপ নেন চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে, সে সময়ের বাস্তবতায় প্রথমে নিজের নামে এবং পরবর্তীতে কৌশলগত ভাবে শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘোষণা দেন,মেজর জিয়ার কণ্ঠে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরুর ঘোষণা পাঠশুনে মুক্তি পাগল মানুষ স্বাধীনতা অর্জনের শপথ নিয়ে একযোগে চুড়ান্ত সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তীব্র প্রতিরোধের মুখে পাকিস্তানী হানাদার এবং তাদের দোষর পিছু হটতে বাধ্য হয়।
মাত্র নয় মাসে বীর মুক্তিসেনারা ছিনিয়ে আনে বিজয়ের রক্তিম লাল সূর্য বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় হয় বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্রের।
যাদের অসামান্য অবদান আর সুমহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি লাল সবুজের একটি পতাকা, একটি মানচিত্র, একটি স্বাধীনতা সার্বভৌম রাষ্ট্র,বিজয়ের এই মাসে জাতির সেই সব সূর্য সন্তানের স্বরণ করছি বিনম্র শ্রদ্ধায়।
স্বাধীন জাতি হিসেবে আমরা ৪৯ টি বছর অতিক্রম করেছি।স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উৎযাপনের অপেক্ষায় বাংলাদেশ।
অনেক প্রতিকুলতা থাকা সত্ত্বেও এই দীর্ঘ সময়ে অনেক কিছু অর্জিত হলেও স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল আমরা ভোগ করতে পারিনি আজও ।
অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন সম্ভব হয়নি এতো দিনেও।
ক্ষুধা- দারিদ্র মুক্ত যে দেশের স্বপ্ন দেখেছিলো বাংলাদেশের মানুষ তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি।
স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই বারবার অগণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতা দখলের ফলে এতো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েও স্বাধীনতার মূল লক্ষ,আশা-আকাঙ্ক্ষা চেতনার বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।
ক্ষমতালোভী একশ্রেণী সুকৌশলে ক্ষমতায় আসিন হয়ে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ব্যাহত করছে।
বারবার অগণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতা দখলের কারণে সুশাসন প্রতিষ্টিত হয়নি,ব্যক্তি বিশেষের বন্দনা, স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস দখলের অপচেষ্টা, প্রকৃত ইতিহাস আড়াল করে লাখো শহীদের রক্তে লিখিত স্বাধীনতার ইতিহাসকে কলুষিত করা হয়েছে বারংবার।
ক্ষমতা কেন্দ্রীক রাজনীতির জাঁতাকলে অপার সম্ভাবনার বাংলাদেশ সীমাহীন সমস্যায় জর্জরিত, এ অবস্থার পরিবর্তন না ঘটালে স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল আমরা পাবোনা।
প্রতিহিংসা, বিভেদ-বিভাজনের নগ্নতায় স্বাধীনতা অর্জিত হওয়ার এতো বছর পরও দেশের মানুষের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির মাঝে বিরাট ব্যবধান অবলোকন করা যায়।
এ ব্যবধান দূর করা না গেলে স্বাধীনতা অর্জনের গৌরব ম্লান হয়ে যাবে।
আমাদেরকে ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করে দেশ গড়ার কাছে আত্মনিয়োগ করা অত্যাবশ্যক।যদিও সেই পথ আজ অনেকটাই রুদ্ধ।
তবুও এখনই সময় ক্ষুধা,দারিদ্র, সন্ত্রাস, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
সুখী-সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় অঙ্গিকার নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ সুগম করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
সুচিন্তিত পরিকল্পনা গ্রহন করে সমাজ ও দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটাতে তারুণ্যের মেধা ও শ্রমের সঠিক ব্যবহার করতে পারলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে দুর্বার গতিতে, মানুষ পাবে স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল।
সন্ত্রাস, দুর্নীতি, অনিয়ম বন্ধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারলে সমাজ থেকে দূর হবে অপরাধ প্রবণতা।
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অরাজকতা, প্রতিহিংসার নোংরামি দূর করতে পারলে দেশে আসবে স্থিতিশীলতা।
না পারলে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ পরিচিত হবে অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে,সু্যোগ নিবে প্রতিবেশী রাষ্ট্র, মোড়লের ভুমিকায় আসবে শোষণ করতে।
এই দেশ আমাদের, সমস্যাও আমাদের, সমাধানও খুঁজতে হবে আমাদের।
কারো তাঁবেদারি তোষামোদ করা কিংবা কারো সেবাদাস হওয়ার জন্য অর্জিত হয়নি স্বাধীনতা।
বিশ্ব মানচিত্রে একটি উন্নত শক্তিশালী উন্নয়নশীল গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নাম থাকবে সবার উপরে এটাই প্রত্যাশা সবার।
লাখো শহীদের রক্তে রাঙানো লাল সবজের পতাকায় যেনো কলঙ্কিত দাগ না লাগে, স্বাধীনতা মানচিত্র যেনো অক্ষুণ্ণ থাকে তার জন্য সজাগ দৃষ্টি রাখা প্রজন্মের দায়িত্ব।
স্বাধীনতা অর্জিত হওয়ার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দাঁড়িয়ে আমাদের শপথ হউক এই দেশ আমার, আমি তার অতন্দ্র প্রহরী, আমার হাত ধরেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে বিশ্ব জয়ের পথে।
কোনো অশুভ শক্তির কালো ছায়া গ্রাস করতে পারবেনা আমাদের মানচিত্র,রক্তের দামে কেনা লাল সবুজের বিজয় কেতন।
ভালো থাকুক বাংলাদেশ
ভালো থাকুক আমাদের স্বাধীনতা।

লেখক- কবি-সংগঠক,সমাজকর্মী

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© 2020 Nongartv.com . Design & Development by PAPRHI
Theme Customization By Freelancer Zone