আজ আখেরি চাহার শোম্বা। অনেকে এ দিবসটি সম্পর্কে অবগত নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে ছুটি থাকায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের আনন্দবোধ কাজ করে এই দিনে। আখেরি চাহার শোম্বার ছুটি উপভোগ করছেন এরকম অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীও এ দিবসের তাৎপর্য্য সম্পর্কে অবগত নয়। তবে প্রায় সকলেই জানেন, এটা ধর্মীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস! কতটুকু ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবস তা নিয়ে কোথাও কোনো আলোচনা লক্ষ্য করা যায় না। ধর্মীয় স্কলার বা পণ্ডিতগণের নিকট জানতে চাইলে তাঁরা অবশ্য এ দিবসটি এতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন না।
কথিত আছে, উপমহাদেশে ইংরেজ শাসনামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির তালিকা তৈরির সময় মুসলমানরা লক্ষ্য করলেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্মীয় দিবসসমূহের কারণে মুসলিমদের চেয়ে অধিক ছুটি উপভোগ করছেন। তাই তারা ইংরেজদেরকে ইসলামধর্মের গুরুত্বপূর্ণ দিবসসমূহের তালিকা দিয়ে বললেন, আমাদেরও এই এই দিবসে ছুটি দরকার। কারণ এগুলো ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবস। এরই সূত্র ধরে নাকি ‘আখেরি চাহার শোম্বা’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে সরকারি ছুটি এবং অন্যান্য অফিসে ঐচ্ছিক ছুটির তালিকায় যুক্ত হয়েছে। অনেক ঘাটাঘাটি করেও এ ঘটনার কোনো তথ্য-সূত্র খুঁজে পাইনি।
এদিকে আখেরি চাহার শোম্বার ছুটি উপভোগ করা হলেও এ দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য্য নিয়ে কাউকে তেমন তৎপরতা চালাতে দেখা যায় না। জানা যায়, হিজরি সালের সফর মাসের শেষ বুধবার মুসলিম বিশ্বে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ স্মারক দিবস হিসেবে পবিত্র আখেরি চাহার শোম্বা পালিত হয়।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনে আখেরি চাহার শোম্বা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নবী করিম (সা.) ইন্তেকালের আগে এদিনে কিছুটা সুস্থতা বোধ করেছিলেন। ফারসিতে এ দিনটিকে আখেরি চাহার শোম্বা নামে অভিহিত করা হয়।
আখেরি চাহার শোম্বা মূলত ফার্সি পরিভাষা। ফার্সি শব্দ আখেরি অর্থ শেষ। চাহার অর্থ সফর মাস এবং শোম্বা অর্থ বুধবার। অর্থাৎ সফর মাসের শেষ বুধবারে মোহাম্মদ (সা.)-এর সাময়িক সুস্থতাকে স্মরণ করে মুসলমানরা যে ইবাদত করেন, তাই আখেরি চাহার শোম্বা। পৃথিবীর সব মুসলিম যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে এই দিনটি স্মরণ না করলেও বাংলাদেশসহ ভারত উপমহাদেশের মুসলিমরা এই দিন বিশেষভাবে পালন করেন। পারসিক প্রভাবিত এই এলাকার ইসলাম ও মুসলিম সংস্কৃতির অন্যতম বিষয় আখেরি চাহার শোম্বা। কারণ, এ অঞ্চলের সুফিরা এবং দিল্লির শাসকরা রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দিনটি পালন করতেন। ফলে ধীরে ধীরে দিনটি ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালন করা এই এলাকার মুসলিমদের ধর্মীয় জীবনের অংশ হয়ে ওঠে। [সূত্র: আখেরি চাহার শোম্বার ইতিহাস ও তাৎপর্য
মো. আবুসালেহ সেকেন্দার]
ফারসি শব্দমালা আখেরি চাহার শোম্বা অর্থ শেষ চতুর্থ বুধবার। রাসুলুল্লাহ (সা.) জীবনে শেষবারের মতো রোগমুক্তি লাভ করেন বলে দিনটিকে মুসলমানেরা প্রতিবছর ‘শুকরিয়া দিবস’ হিসেবে পালন করেন। তাঁরা নফল ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে দিবসটি অতিবাহিত করেন। তাই উম্মতে মুহাম্মদীর আধ্যাত্মিক জীবনে আখেরি চাহার শোম্বার গুরুত্ব ও মহিমা অপরিসীম।
এদিকে উইকিপিডিয়ায় মূল ঘটনা এভাবে বর্ণনা ১১ হিজরির শুরুতে রসূলুল্লাহ (স) গুরতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ক্রমেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তিনি এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে, নামাজের ইমামতি পর্যন্ত করতে পারছিলেন না। ২৮ সফর বুধবার মহানবী (স) সুস্থ হয়ে ওঠেন। দিনটি ছিল সফর মাসের শেষ বুধবার। এই দিন কিছুটা সুস্থবোধ করায় রসূলুল্লাহ (স) গোসল করেন এবং শেষবারের মত নামাজে ইমামতি করেন। মদীনাবাসী এই খবরে আনন্দ-খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলেন[৪] এবং দলে দলে এসে নবী (স) কে একনজর দেখে গেলেন। সকলে তাদের সাধ্যমতো দান-সাদকা করলেন, শুকরিয়া নামাজ আদায় ও দোয়া করলেন। নবীর রোগমুক্তিতে তার অনুসারীরা এতটাই খুশি হয়েছিলেন যে, তাদের কেউ দাস মুক্ত করে দিলেন, কেউবা অর্থ বা উট দান করলেন; যেমনঃ আবু বকর সিদ্দিক (রা) ৫ হাজার দিরহাম, উমর (রা) ৭ হাজার দিরহাম, ওসমান ১০ হাজার দিরহাম, আলী (রা) ৩ হাজার দিরহাম, আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা) ১০০ উট দান করেন। উল্লেখ্য যে, ২৯ সফর তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তার মাত্র কয়েক দিন পর ১২ই রবিউল আউয়াল ইহকাল ত্যাগ করেন মানবতার মুক্তিদূত হযরত মোহাম্মদ (সঃ) ।
Leave a Reply