সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনের মাধ্যমে রায়হান আহমদকে হত্যার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত এই ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূইয়ার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে মহানগর পুলিশ। সোমবার সাময়িক বরখাস্তের পর থেকেই তিনি লাপাত্তা বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রায়হান হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে আকবর হোসেনসহ ৪ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বহিস্কার ও তিনজনকে ফাঁড়ি থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। আকবর ছাড়া বাকীরা সিলেট মেটোপলিটন পুলিশ লাইন্সেই আছেন বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, বাকী অভিযুক্তদের কেনো এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি বাদী হয়ে হেফাজতে মৃত্যু আইনে কতোয়ালি থানায় মামলা করেন। এই মামলায় এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হননি।
বর্তমানে মামলাটির তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে পিবিআই-এর পুলিশ সুপার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খালেদুজ্জামান বলেন, পলাতক ব্যক্তিকে (এসআই আকবর) আমরা গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।
বা্কী অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা আজকেই (বুধবার) মাত্র তদন্ত শুরু করেছি। তদন্তে যাদেরই সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদেরই গ্রেপ্তার করা হবে।
রোববার রায়হান আহমদের মৃত্যুর পর সিলেট মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর বন্দরবাজার ফাঁড়ির ৪ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও ৩ জনকে প্রত্যাহার করা হয়।
ফাঁড়ি ইনচার্জ আকবর ছাড়া বরখাস্ত হওয়া অন্য পুলিশ সদস্যরা হলেন- বন্দরবাজার ফাঁড়ির কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটু চন্দ্র দাস।
প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন- এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেন।
এদের মধ্যে কনস্টেবল তৌহিদ মিয়ার মোবাইল থেকেই সে রাতে টাকা চেয়ে রায়হানের মায়ের মোবাইলে ফোন করা হয়েছিলো বলে অভিযোগ তাদের পরিবারের।
আকবরের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বলেন, সোমবার সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পর থেকেই আকবরের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তার খোঁজে অভিযান চলছে।
উল্লেখ্য, গত ১১ অক্টোবর (রোববার) ভোরে রায়হান আহমদ (৩৩) নামে সিলেট নগরের আখালিয়ার এক যুবক নিহত হন। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে প্রচার করা হয়, ছিনতাইয়ের দায়ে নগরের কাষ্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে নিহত হন রায়হান। তবে বিকেলে পরিবারের বক্তব্য পাওয়ার পর ঘটনা মোড় নিতে থাকে অন্যদিনে। পরিবার দাবি করেন সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দর বাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে প্রাণ হারায় রায়হান।
পরে একইদিন রাত আড়াইটার দিকে পুলিশকে অভিযুক্ত করে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় আসামিদের অজ্ঞাত রেখে হেফাজতে মৃত্যু আইনে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি। পরদিন রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (উত্তর) শাহরিয়ার আল মামুনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সিলেট মহানগর পুলিশ।
তদন্তে নেমে পুলিশ হেফাজতে রায়হান উদ্দিনের মৃত্যু ও নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতাও পায় তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি জানতে পারে রোববার ভোর ৩টার দিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে রায়হান আহমদকে আনা হয় বন্দরবাজার ফাঁড়িতে। সেখানে ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার নেতৃত্বেই তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রায়হানকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সকাল ৭টার দিকে মারা যান তিনি।
প্রসঙ্গত, রায়হান নগরের আখালিয়ার নেহারিপাড়া এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় এক চিকিৎসকের চেম্বারে সহকারি হিসেবে কাজ করতেন।
Leave a Reply