সিলেটে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্মম নির্যাতনে যুবক রায়হান নিহতের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত বলে মন্তব্য করেছেন সিলেট মহানগর পুলিশের নতুন কমিশনার নিশারুল আরিফ। এ ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশ লজ্জিত বলেও জানান তিনি।
মঙ্গলবার রাতে রায়হানের মায়ের সাথে দেখা করার পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি কথা জানান।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- আইনশৃংখলা রক্ষাকারী সকল বাহিনীই পলাতক আকবরকে ধরার চেষ্টা করছে। এছাড়া আকবরকে পালাতে সহায়তাকারীদের চিহ্নিত করে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।
এর আগে রাত সাড়ে ৮ টায় সিলেট মহানগর পুলিশে যোগদানের আগেই পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে নিহত রায়হানের মায়ের সাথে দেখা করতে তাদের আখালিয়াস্থ বাড়িতে যান নতুন কমিশনার নিশারুল আরিফ। এসময় তিনি প্রায় আধাঘন্টা রায়হানের মায়ের সাথে কথা বলেন এবং মামলার সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দেন।
পরে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। এসময় এসএমপি কেন বারবার বিতর্কে জড়াচ্ছে; এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি নিজস্ব একটি পরিকল্পনা নিয়ে এসেছি। এছাড়াও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কিছু নির্দেশনা রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি সকল কিছু গুছানো সম্ভব।
আকবরকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পলাতক এসআই আকবরকে গ্রেপ্তার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল ইউনিট কাজ করছে। পাশাপাশি জনসাধারণের মধ্যে কেউ আকবরের অবস্থান শনাক্ত করতে পারেন বা ধরতে পারবেন। আর যদি আকবরকে জনসাধারণের কেউ গ্রেপ্তার করেন তাহলে দ্রুত আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন।
এর আগে রাত সোয়া সাতটায় ওসমানী বিমানবন্দরে নেমে তিনি নিজের কর্মস্থলে যোগদানের আগেই সোজা হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে যান এবং সেখানে এশার নামাজ আদায় করেন। এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে আখালিয়ার নেহারিপাড়ায় রায়হানের বাড়িতে যান এসএমপির নবনিযুক্ত এই কমিশনার।
এর আগে গত ১১ অক্টোবর পুলিশ ফাঁড়িতে নির্মম নির্যাতনে নিহত রায়হান হত্যাকাণ্ডের পর প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবরের পালিয়ে যাওয়া এবং সার্বিক বিষয়ে এসএমপি কমিশনার গোলাম কিবরিয়ার গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। একাধিক গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশিত হলে গত ২২ অক্টোবর তিনি বদলির আদেশ পান এবং তাঁরই স্থলাভিষিক্ত হলেন নিশারুল আরিফ।
প্রসঙ্গত, রোববার (১১ অক্টোবর) ভোরে পুলিশের নির্যাতনে রায়হান উদ্দিন (৩৩) নামে এক যুবক নিহত হওয়ার অভিযোগ তুলেন তার স্বজনরা। নিহত ওই যুবক সিলেটের আখালিয়ার নেহারিপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে।
পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে মারা গেছেন রায়হান। তবে নিহতের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, পুলিশ ধরে নিয়ে নির্যাতন করে রায়হানকে হত্যা করেছে। পরিবারের অভিযোগে ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠিত করেছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ। তদন্তে নেমে পুলিশ হেফাজতে রায়হান উদ্দিনের মৃত্যু ও নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতাও পায় তদন্ত কমিটি।
এরপর বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ ৫ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ।
Leave a Reply