1. support@nongartv.com : Nongartv :
  2. regularmd@gmail.com : Suhag Rana : Suhag Rana
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১৪ পূর্বাহ্ন

লক্ষণ পাল্টে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে করোনা

ডেস্ক রিপোর্ট:
  • আপডেটের সময় রবিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২০

“অল্প পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে ওঠা
চোখ ওঠা, পেশিতে ব্যথা, ত্বকে লাল র‌্যাশ, চুলকানি, রক্ত জমাট বাঁধা, স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলা, অসংলগ্ন কথা বলা, হঠাৎ চোখে অন্ধকার দেখা নতুন লক্ষণ”

বিশেষজ্ঞদের ধারণা পাল্টে দিয়ে বদলে যাচ্ছে নভেল করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর গতি-প্রকৃতি। বিশ্বকে প্রায় থামিয়ে দেওয়া এই ভাইরাসটি ইদানীং অচেনা নানা উপসর্গ নিয়ে হাজির হচ্ছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই কোভিড সংক্রমণের ক্ষেত্রে মিলছে নতুন নতুন উপসর্গ। অনেকে হয়তো এ সবকে সাধারণ রোগ মনে করে এড়িয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এর অন্তরালে মরণঘাতি বাসা বাঁধছে ভয়ঙ্কর করোনাভাইরাস। গতি প্রকৃতির এই পরিবর্তনে ক্রমান্নয়ে ভয়াবহ হয়ে উঠছে বৈশি^ক মহামারি।
বারবার রোগটি তার গতি-প্রকৃতি পরিবর্তন করায় সংক্রমণের মাত্রা ও জটিলতা বাড়ছে। প্রথম প্রথম করোনাভাইরাস  বা কোভিড-১৯ রোগটির উপসর্গ খুব বেশি ছিল না। প্রাথমিকভাবে জ্বর, শুকনো কাশি, স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতিহীনতা ইত্যাদিতেই সীমাবদ্ধ ছিল। আবার কিছু ক্ষেত্রে বাহ্যিক কোনো উপসর্গই দেখা যায়নি। ধীরে ধীরে উপসর্গের তালিকা দীর্ঘ হতে থাকে। কিছুদিন পর সাধারণ উপসর্গ হিসেবে দেখা দেয়Ñ গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা, ঠা-া লাগা এবং সর্দি, তীব্র অবসাদ, ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া ইত্যাদি। আর জটিল উপসর্গগুলোর মধ্যে ছিল শ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়া বা মারাত্মক শ্বাসকষ্ট হওয়া, বুকে ব্যথা বা চাপ চাপ ভাব প্রভৃতি। বর্তমানে কোভিড সংক্রমণ এখন আর প্রচলিত সেসব উপসর্গে থেমে নেই, বরং দিন দিন যোগ হচ্ছে নতুন নতুন উপসর্গ। এসব উপসর্গের মধ্যে আছে ক্লান্তি, অবসাদ, কাজকর্মে অনাগ্রহ প্রভৃতি। সিঁড়ি ভাঙা বা অল্প পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে যাওয়া ইত্যাদিকেও রোগটির লক্ষণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন নতুন ও অচেনা যেসব উপসর্গ দেখা যাচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে-চোখে সমস্যা, চোখ লাল হওয়া, অথবা হঠাৎই চোখ জ¦ালাপোড়া বা প্রদাহ সৃষ্টি, পেশিতে ব্যথা, গাঁটে ব্যথা, হাত-পা কামড়ে ধরা ইত্যাদি।
চিকিৎসকদের মতে প্রায়ই মানব শরীরে করোনার লক্ষণগুলোর পরিবর্তন হচ্ছে। পূর্বের উপসর্গ ও লক্ষণের পাশাপাশি সম্প্রতি লন্ডনের কিংস কলেজের গবেষকরা নতুন তথ্য সামনে এনেছেন। তারা বলছেন, এই ভাইরাস অত্যন্ত দ্রুত নিজেকে বদল করে। শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যাথা এই রোগের নতুন লক্ষণ। মাথাসহ শরীরে অন্যান্য ব্যাথার লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর আসতে পারে। তবে আগের মতোই আক্রান্তদের সর্দি-কাশি থাকছেই। কারো কারো আবার শরীরে র‌্যাশ দেখা দিচ্ছে।
ভারতের কয়েকটি গণমাধ্যম দাবি করেছে, করোনায় আরও ছটি নতুন উপসর্গের দেখা পেয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। মুখের ভেতরে লাল র‌্যাশ, ত্বকে লাল লাল দাগ ওঠা, আর্টিকেরিয়া, চিকেন পক্স, পায়ে নেটের মতো লাল লাল শিরা, সারা গায়ে চুলকানো, রক্ত জমাট বাঁধার মতো উপসর্গকেও এখন যুক্ত করা হচ্ছে করোনার উপসর্গেও তালিকায়। এমন কি খিদে কমে যাওয়ার প্রবণতার লক্ষণকেও এ ভাইরাসের সংক্রমণের লক্ষণ বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। আক্রান্ত অনেকেরই আবার চোখে অন্ধকার দেখা বা হঠাৎ কিছুক্ষণের জন্য ব্ল্যাকআউট হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা যাচ্ছে। কথাবার্তায় জড়তা আসা বা স্পষ্টভাবে কথা বলতে না পারা অথবা অহেতুক বাড়তি কথা বলা বা অসংলগ্ন কথা বলাকেও এই রোগের লক্ষণ বলে জানা যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ৬০ বছর বা তদোর্ধ্ব অন্য রোগে আক্রান্ত, কড়া ডোজের ওষুধ খাওয়া এবং দীর্ঘদিন ধরে জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এসব উপসর্গ দেখা যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। বলা হচ্ছে প্রধানত ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, হৃদরোগ, ফুসফুসে সংক্রমণ ও কিডনির জটিল রোগের আক্রান্তরাই এইসব উপসর্গ বয়ে বেড়াচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু এসব নতুন উপসর্গ শুধু বয়স্ক রোগীর ক্ষেত্রেই দেখা মিলছে সে ক্ষেত্রে তারাই সবথেকে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। বিশেষ করে তারা আক্রান্ত কি না সেটা বুঝে উঠতেই চলে যাচ্ছে অনেকটা সময়, ফলে দ্রুতই তাদের শারীরিক অবনতি ঘটছে।
দেশের বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী করোনার এসব নতুন লক্ষণের ব্যাপারে ভোরের পাতাকে বলেন, প্রথম দিকে সাধারণ জ¦র, সর্দি-কাশিই ছিল করোনার লক্ষণ। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে করোনা ভাইরাসের জেনেটিক মিউটেশন বা ক্রমাগত রূপান্তর ঘটছে। এর ফলে রোগের লক্ষণেও নতুন নতুন পরিবর্তন আসছে।
তিনি বলেন, উল্লেখযোগ্য জ¦র না থাকার পরও পেট ব্যাথা, পাতলা পায়খানা, শরীরে র‌্যাশ ইত্যাদি রোগের চিকিৎসা করতে এসে অনেকের করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ছে। এমনটি ব্রেন স্ট্রোকের রোগীর মধ্যেও করোনার সংক্রমণ মিলছে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে করোনা নতুন নতুন উপসর্গ নিয়ে হাজির হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে হাসপাতালে যে রোগ নিয়ে চিকিৎসা করতে আসুক না কেন, তাকে প্রথমেই কোভিড টেস্ট করাতে হবে। তাতে ক্রমাগত রূপান্তর হতে থাকা ভাইরাসটির নানা উপসর্গ শনাক্ত করা যাবে। এতে দ্রুততম সময়ে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা সম্ভব হবে। তিনি জানান, দেশের করোনা সংক্রমণের শিকার ব্যক্তির ক্ষেত্রে হাঁচি, কাশি, সর্দি, শ্বাসকষ্ট ও জ্বরের উপসর্গ যেমন রয়েছে তেমনি সংক্রমিত ব্যক্তির শরীরে নাক একেবারেই বন্ধ হওয়া, কণ্ঠস্বর বসে যাওয়ার মতো নতুন ধরনের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে।
আমেরিকান জার্নাল অব গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেটে ব্যথা এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল সমস্যা করোনার নতুন উপসর্গ। এমনকি কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ চুল পড়ে যাওয়াও অনেকটাই ভীতির কারণ হয়ে দাড়াচ্ছে। এসব উপসর্গকে লোকজন বেশিরভাগ সময়ই এড়িয়ে চলছেন বা গুরুত্ব দিতে অনিচ্ছা দেখাচ্ছেন।  কিন্তু এ ব্যাপারে সচেতন না হলে মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। পরিবারের কারো ভিতরে নতুন এসব উপসর্গ দেখা দিলে তাদেরকে আলাদা ভাবে রাখা দরকার বলেই তারা মনে করছেন। হোম কোয়ারেন্টিন মেনে ২৪ ঘণ্টা ওই রোগীর ওপর নজর রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।  বিশেষজ্ঞরা বলছেন এসময় লক্ষ্য রাখতে হবে তার আর কোনো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে কি’না বা আগের উপসর্গ বেড়েছে কিনা। এ বিষয়ে সচেতন না হলে অতি সহজেই পরিবারের অন্য সদস্যরা করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। এসব লক্ষণ বাদেও এমন কিছু মানুষ আছে, যারা করোনায় আক্রান্ত হলেও তাদের দেহে কোনো উপসর্গই দেখা দিচ্ছে না। একে বলে এ-সিম্পটোমেটি।
এর আগে জানা গিয়েছিল, করোনায় আক্রান্ত ৪০ শতাংশ মানুষই উপসর্গবিহীন। সম্প্রতি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, উপসর্গবিহীন কোভিড-১৯ রোগী ৫ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। এই শ্রেণির মানুষ জানতেও পারছে না যে তারা করোনাভাইরাস বহন করছে। এটিই এখন বেশি দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধক্ষমতার কারণে তাদের তেমন সমস্যা স্পষ্ট হয় না, কিন্তু তাদের মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত কম রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ তাদের সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন।
নতুন উপসর্গ আতঙ্কের কারণ :করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ বা সেকেন্ড ওয়েভ নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। যদিও এই দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ভিতরে মতভেদ রয়েছে। তারপরেও অবস্থা জানান দিচ্ছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এখন বিশ^কে টালমাটাল করে দিচ্ছে। প্রথম ধাক্কা সামলাতে যেয়ে বিশে^ প্রায় চৌদ্দলাখ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। বিভিন্ন গণ মাধ্যমের খবরে এই সংখ্যা দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হতে পারে। তারপরেও সে পরিসংখ্যান উঠে এসেছে সেটি ভয়ঙ্কর। তার উপর এই দ্বিতীয় ঢেউ মানুষকে আরও আতঙ্কের ভিতরে ঠেলে দিয়েছে। এই ঢেউ কেবল পশ্চিমা বিশ^ই নয়, বাংলাদেশেও ঘটার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই সরকার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু প্রস্তুতি ভ-ুল করে দিচ্ছে নয়া উপসর্গগুলো।
এদিকে করোনার প্রাথমিক ঢেউ মোকাবিলায় বিশে^ লকডাউন চালু করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তা অব্যাহত রাখা সম্ভব না হওয়ায় এক সময় লকডাউন থেকে সরকারকে সরে আসতে হয়। লকডাউনের সময়ে করোনা সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলেও, লকডাউন তুলে দেওয়ার পর এখন প্রতিদিন লাখো লোক আক্রান্ত হচ্ছে ভয়াবহ ভাইরাসটিতে। বাংলাদেশে প্রতিদিন দু’হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। তাই করোনা থেকে নিরাপদে থাকতে সতর্ক থাকা আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর জোর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সরকার করোনা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি মানার যে নির্দেশনা জারি করেছে তা সকলকে মেনে চলাকেই টিকা না আসা পর্যন্ত একমাত্র প্রতিরোধী কার্যক্রম বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র : ভোরের পাতা

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© 2020 Nongartv.com . Design & Development by PAPRHI
Theme Customization By Freelancer Zone