করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যায় বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে শনাক্ত রোগী ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
এছাড়া মৃত্যুর মিছিলও বাড়তে বাড়তে ২৫ হাজার পার হয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ৩৪ হাজার ৯৫৬ নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এর আগে ভারতে একদিনে এত বেশি রোগী আর শনাক্ত হয়নি।
সংবাদসূত্র : এনডিটিভি, এবিপি নিউজ দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ ভারতে এ পর্যন্ত শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ তিন হাজার ৮৩২ জনে। কেবল শনাক্তে নয়, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনাভাইরাসে সর্বোচ্চ মৃত্যুরও রেকর্ড হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। জানুয়ারিতে কেরালায় প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ভারতে রোগীর সংখ্যা ১০ লাখে পৌঁছাতে সময় লাগল সাড়ে পাঁচ মাস। এক থেকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখে পৌঁছাতে সময় লেগেছিল ১১০ দিন।
এক লাখ থেকে দুই লাখে সেই সময় লেগেছে মাত্র ১৫ দিন। দুই থেকে তিন লাখে ১০ দিন, তিন থেকে থেকে চার লাখে ৮ দিন, চার থেকে পাঁচ লাখে ছয় দিন, পাঁচ থেকে ছয় লাখে পাঁচ দিন, ছয় থেকে সাত লাখে পাঁচ দিন, সাত থেকে আট লাখে চার দিন, ৮ থেকে ৯ লাখে তিন দিন সময় লেগেছে। শেষ ৯ লাখ থেকে ১০ লাখে পৌঁছাতে অবশ্য আগের মতোই তিন দিনই সময় লেগেছে।
অর্থাৎ, শেষ পাঁচ লাখ সংক্রমণ হয়েছে মাত্র ২০ দিনে। এই সংক্রমণ বৃদ্ধির হার না কমলে এই ব্যবধান যে ক্রমেই কমতে থাকবে, তা বলাই বাহুল্য। ফলে উদ্বেগ বাড়ছে সব মহলে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মার্চে ভারতজুড়ে কঠোর লকডাউন দেয়ার কারণে সংক্রমণের হার ছিল অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। পরের দিকে লকডাউন শিথিলের পর পাল্লা দিয়ে বেড়েছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। ভারতের মধ্যে কেবল মহারাষ্ট্রেই শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুই লাখ ৮৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, মৃত্যু হয়েছে ১১ হাজার ১৯৪ জনের। শনাক্ত রোগী দেড় লাখ ছাড়িয়ে গেছে তামিলনাড়ুতে।
দিল্লিতেও সরকারি হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা পেরিয়েছে এক লাখ ১৮ হাজার। কর্ণাটকে শনাক্ত রোগী ৫১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ৪৫ হাজার ৪৮১ রোগী নিয়ে পেছনেই আছে গুজরাট। ভারতে করোনাভাইরাসে মৃত্যু তালিকায় মহারাষ্ট্রের পরেই অবস্থান দিল্লি ও তামিলনাড়ুর।
পশ্চিমবঙ্গেও কোভিড-১৯ এ মৃতু্য হাজার ছাড়িয়েছে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত রাজ্য শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ১১৭ জনে। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকলেও ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠার হার কর্মকর্তাদের স্বস্তি দিচ্ছে। দেশটিতে শুক্রবার পর্যন্ত ছয় লাখ ৩৫ হাজারের বেশি রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্গালুরুর ‘ইনডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স’র (আইআইএসসি) একটি সমীক্ষা হাড় হিম করা পরিসংখ্যান দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, এখনকার হারে বাড়তে থাকলে আর মাত্র দেড় মাসে, অর্থাৎ সেপ্টেম্বরের গোড়ায় ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছে যেতে পারে ৩৫ লাখে।
বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারে কাজ করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে ভারতও রয়েছে। করোনার সম্ভাব্য ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পথে অনেকটাই এগিয়েছেন দেশটির বিজ্ঞানীরা।
এদিকে, মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস এক বক্তৃতায় বলেছেন, ‘ভারতের ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলো পুরো বিশ্বের জন্য করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করতে সক্ষম।’ তিনি বলেন, ‘ভারতে এর মধ্যেই করোনা ভ্যাকসিনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ শেষ হয়েছে। তাদের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও খুব ভালো কাজ করছে।
কোভিড-১৯ : ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ’ শীর্ষক এক প্রামাণ্য অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বৃহস্পতিবার তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নিয়েছিলেন বিল গেটস। তখন তিনি বলেছিলেন, করোনা সংকট মোকাবিলায় ভারতের ভূমিকা প্রশংসনীয়। লকডাউনের বিধিনিষেধ মেনে চলা হোক বা ভ্যাকসিনের গবেষণা, সবক্ষেত্রেই ভালোভাবে কাজ করছে ভারত। তিনি আরও বলেন, ‘মহামারি মোকাবিলা করা ভারতের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এই কাজ দক্ষতার সঙ্গেই করার চেষ্টা করছে তারা।
Leave a Reply