বন্দরবাজার ফাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব করা ও আকবরকে পালাতে সহায়তা করা সাংবাদিক নোমানকে গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলার পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন আহমদ।
সোমবার (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নোমানকে গ্রেপ্তার করতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে তার বাবা, মা ও স্ত্রীকে আমরা জিজ্ঞসাবাদ করেছি। এমনকি যারা নোমানকে সহযোগিতা করেছে তাদের সবার ব্যাপারে আমাদের নজরদারি আছে।’
এসময় পুলিশ সুপার বলেন, পুলিশের কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মাধ্যমে আকবরকে সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছি। সোমবার (৯ অক্টোবর) সকাল ৯ টায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সন্ধ্যায় প্রেস কনফারেন্সে তিনি বলেন, ‘গতকাল আমাদের কাছে একটি তথ্য ছিলো সে ভারতের পালিয়ে যাবে। তাই আমরা সীমান্তবর্তী এলাকায় অতিরিক্ত নজরদারি শুরু করেছিলাম। পরে আজ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এবং আজ রাতেই তাকে পিবিআই’র কাছে হস্তান্তর করা হবে।’
একটি ভিডিওতে দেখা গেছে ভারতের খাসিয়ারা তাকে আটক করেছে এমন প্রশ্নে পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে কোন ভিডিও করা হয়নি। এ ভিডিও কে কোথায় করেছে তা আমাদের জানা নেই। এরকম কিছু দেখিনি। তবে তাকে জেলা পুলিশের কানাইঘাট থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।’
আকবরকে কেউ হস্তান্তর করেছে কি না এমন এক প্রশ্নে পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বলেন, ‘কেউ হস্তান্তর করেনি। কিন্তু আমরা পুলিশের সকল কাজে জনগের সহযোগিতা নেই। তাকে গ্রেপ্তার করতে আমাদের কিছু বন্ধু সহযোগিতা করেছে।’
এসময় প্রেস ব্রিফিং এ উপস্থিত ছিলেন সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহমেদ।
এদিকে প্রেসকনফারেন্স চলাকালে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের বাইরে বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশ সুপার ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, আকবরে ফাঁসি চাই স্লোগান দিতে থাকেন। দীর্ঘ সময় ধরে তাদের স্লোগান চলতে থাকে।
এর আগে বিকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে কানাইঘাট থেকে আকবরকে সিলেটের পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। পরে সন্ধ্যা পৌনে ৬ টায় আকবরকে নিয়ে আসা হয় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে। তাই বিকাল থেকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের আশপাশ এলাকায় সিলেট জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
অপরদিকে আকবরকে সিলেটে নিয়ে আসার পর সিলেট জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এক প্রেস কনফারেন্সে অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে আকবরকে সিলেটে নিয়ে আসার খবরে বিক্ষোদ্ধ জনতার ঢল নামে সিলেটের কোর্ট পয়েন্ট এলাকাসহ পুলিশ সুপার কার্যালয় ও বন্দরবাজার পুলিশ ফাড়ির আশপাশ এলাকায়।
এরও আগে গত রোববার গভীর রাতে ভারতের দনা সীমান্ত এলাকার খাসিয়াদের হেডম্যানরা রায়হান হত্যাকাণ্ডের অভিযুক্ত এসআই আকবরকে আটক করে তাদের হেফাজতে রাখে।
পরে সোমবার দুপুর ১ টার দিকে ভারতীয় খাসিয়ারা আকবরকে বাংলাদেশ সীমান্তে স্থানীয় গরু ব্যবসায়ীসহ লোকজনদের কাছে বুঝিয়ে দেন। পরে এ ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে থানা পুলিশ ও জেলা পুলিশের একটি টিম তাকে জনতার কাছ থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
গত ১১ অক্টোবর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে গুরুতর আহত হন রায়হান। তাকে ওইদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন বন্দরবাজার ফাঁড়ির এএসআই আশেকে এলাহীসহ পুলিশ সদসরা। সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান রায়হান।
ঘটনার পর পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, নগরের কাস্টঘরে গণপিটুনিতে রায়হান নিহত হন। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় ফাঁড়িতে পুলিশি নির্যাতনে প্রাণ হারান রায়হান।
এ ঘটনায় রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে সিলেট মহানগর পুলিশের তদন্ত কমিটি ঘটনার সত্যতা পেয়ে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবরসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করেন।
মামলাটি পুলিশ সদরদপ্তরের নির্দেশে পিবিআইয়ের তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
Leave a Reply