দীপক কুমার রায় জানান, সোমবার উদ্ধার অজ্ঞাত লাশের পরিচয়ও পাওয়া গেছে। তিনি সদর উপজেলার তিলারদি গ্রামের আবসার উদ্দিনের ছেলে মো. সাইম।
এছাড়া, ঢাকা জেলার দোহার উপজেলায় দাফন করা আমির হোসেনের (৫৫) স্থায়ী ঠিকানা মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলায়; তিনি রুস্তম শরীফের ছেলে। তাই তার লাশটিও মুন্সীগঞ্জেরই গণনা করা হয়েছে বলেন দীপক।
মঙ্গলবার মুন্সীগঞ্জে বাড়ি বাড়ি সমবেদনা জানাতে গিয়ে স্বজনদের আহাজারিতে চোখের জল ফেলেছেন সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ মেজবাহ-উল-সাবেরিন। এ সময় নিহত সুবর্ণা বেগমের পরিবারকে সান্তনা জানাচ্ছিলেন তিনি।
উপজেলার সহকারী কমিশনার শেখ মেজবাহ বলেন, “আসলে এটা আসলে সহ্য করা যায় না। এরকম একটা স্বাভাবিক পরিবেশে যেখানে কোনো ঝড় নেই, নদী স্বাভাবিক এমনকি দিনের বেলা এমনটা হতে পারে না।
“শুধুমাত্র একটু অসর্তকতার জন্য এতগুলো প্রাণ চলে গেল। এ প্রাণগুলোর সাথে কয়েকশ’ পরিবার জড়িত। তাদের হাসিকান্না, সুখদুঃখ জড়িত, বেঁচে থাকার অবলম্বন। ছোট ছোট বাচ্চা আছে কারো কারো।”
সোমবার সকালে মনিং বার্ড লঞ্চটি ডুবিতে কোনো কোনো পরিবারের একমাত্র উপর্জনকারীকেই হারিয়েছে বলে জানান তিনি।
মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিমের পশ্চিমপাড়া গ্রামের দিদার হোসেন কাজ করতেন রাজধানীর বেগমগঞ্জে জনতা ট্রেডার্স নামের এক ডালের আড়তে। প্রতিদিনের মতো সোমবারও কাজে যাচ্ছিলেন তিনি।
মাত্র আট মাস আগে দিদার রোকসানা আক্তারের সঙ্গে সংসার পাতেন। আট মাসের সংসারের স্মৃতি মনে করে বুক চাপড়াচ্ছিলেন রোকসানা। স্বামীর ছবি বুকে নিয়ে চোখের পানি ফেলছিলেন আর মোবাইল ফোনটি বারবার বুকে জড়িয়ে ধরে বলছিলেন, “এই ফোনেই তো প্রিয় মানুষটির সাথে কত না কথা হতো।”
সোমবার ওই লঞ্চে দিদারের সঙ্গে তার বোন রুমা আক্তারও তাদের অসুস্থ ভগ্নিপতিকে দেখতে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। ভগ্নিপতির ওখানে বোনকে রেখে দিদারের চলে যাওয়ার কথা ছিল কাজে। বিকালে বোনকে নিয়েই ফেরার কথা ছিল। বরং অসুস্থ ভগ্নিপতিই মুন্সীগঞ্জে এসে শ্যালক ও শ্যালিকাকে শেষ বিদায় জানিয়ে গেলেন।
লঞ্চ দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের বিচার দাবি করেন রোকসানা।
এদিকে, দিদারের বোন রুমা আক্তারের বিয়ে করেছেন আড়াই বছর আগে। তার স্বামী মুজিবুর রহমান বিদেশ ফেরত।
শ্বশুরবাড়িতেই স্ত্রীর স্মৃতি খুঁজে বেড়াচ্ছেন তিনি। মুজিবর বলছেন, “এই কষ্ট আমি কিভাবে বুঝাবো।”
ভাই-বোনের মর্মান্তিক এ মৃত্যুতে তাদের স্বজনরাও শোকে কাতর। দিদার ও রুমার খালাত বোন খুকমনির বুকফাটা আর্তনাদে উপস্থিত সবার চোখে পানি এনে দিয়েছে। দিদারের শাশুড়ি হালিমা বেগমও সদ্য স্বামীহারা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন।দিদারের বড় ভাই আওলাদ হোসেন বলেন, ভাই-বোন যে আমারে এভাবে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল এখন আমি কি করব। মাও নেই বাবাও নেই, ভাইবোনের মমতাই আমাকে বাঁচিয়ে রাখছিল, এখন আমি কি করবো?
এ দুর্ঘটনায় মৃতদের মধ্যে রয়েছেন মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার সুজানগর গ্রামে সুবর্ণা বেগম (৩৮) এবং তার ১৫ বছরের ছেলে তামিম হোসেন। তাদের স্বজনদের আর্তনাদে ভারি হয়ে ওঠে পরিবেশ।
লঞ্চটিতে বেঁচে যাওয়া রাজধানীর বিপণী বিতানের দোকানি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঢাকা-কাঠপট্টি লঞ্চগুলো বাদ দিয়ে মানসম্মত লঞ্চ দেওয়া দরকার। এ রুটে এখন ছোট আকারের ৫টি লঞ্চ চলাচল করছে।
মুন্সীগঞ্জের ডিসি মনিরুজ্জামান তালুকদার জানান, নিহতদের তালিকা করা হয়েছে। প্রথম দিন মুন্সীগঞ্জের ৩০টি লাশ উদ্ধার হয়। এরমধ্যে ১৭ জনের সরকারিভাবে ২০ হাজার টাকা করে মানবিক সহায়তা প্রদান করে ঢাকা জেলা প্রশাসন। আর বাকি ১৩ জনের মানবিক সহায়তা প্রদান করে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন।
জানাজায় অংশ গ্রহণ করে মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার ও পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন জানাজায় অংশ নেন। পরে তারা রাতেই কয়েকটি বাড়িতে স্বজনহারাদের সমমর্মিতা জানাতে যান।
Leave a Reply