বিদায়ী নভেম্বর মাসে দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৪৪৩ টি দুর্ঘটনায় ৪৮৬ জন নিহত ও ৭৪১ জন আহত হয়েছে। একই সময় রেলপথে ৫০ টি দুর্ঘটনায় ৫২ জনের প্রাণহানি ও ১৩ জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে ৬ টি দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত ও ২০ জন আহত এবং ৪ জন নিখোঁজের সংবাদ পাওয়া গেছে।
এ সময়ে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সম্মিলিতভাবে মোট ৪৪৯ টি দুর্ঘটনায় ৫৩৯ জন নিহত ও ৭৭৪ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। দেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক, অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে বুধবার (২ ডিসেম্বর) সংগঠনটি এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এ মাসে সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্তদের মধ্যে ২০৩ জন চালক, ১৫৫ জন পথচারী, ৯৪ জন নারী, ৪৯ জন শিশু, ৪২ জন পরিবহন শ্রমিক, ৩৩ জন শিক্ষার্থী, ১৬জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ১০জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ১ জন আনসার ও ৯ জন পুলিশ সদস্য, ৮ জন শিক্ষক, ৫ জন বিচারক, ৩ জন চিকিৎসক এবং ৩ জন সাংবাদিকের পরিচয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।
এর মধ্যে নিহত হয়েছে ১৫৭ জন চালক, ১৩৯ জন পথচারী, ৭২ জন নারী, ৩২ জন শিশু, ২৫ জন পরিবহন শ্রমিক, ২৫ জন ছাত্র-ছাত্রী, ১৪ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ৮ জন শিক্ষক, ৩ জন চিকিৎসক, ৫ জন পুলিশ ও ১ জন আনসারবাহিনীর সদস্য।
এইমাসে সংগঠিত দুর্ঘটনায় ২৬.৭৬ শতাংশ ট্রাক, পিকআপ ও কাভার্ডভ্যান, ২৪.৮৩ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৩.১৪ শতাংশ বাস, ১১.৬৯ শতাংশ নছিমন-করিমন, ৯.৯৩ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৯.২৯ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইক এবং ৪.৩২ শতাংশ কার-জীপ-মাইক্রোবাস সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
এ মাসে একদিনে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় ১৯ নভেম্বর, এইদিনে ২০ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৮ জন নিহত ২৩ জন আহত হয়। একদিনে সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় ২৩ নভেম্বর, এইদিনে ৯ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ জন নিহত ১৪ জন আহত হয়।
মোট দুর্ঘটনার ৫৫.০৮ শতাংশ গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২২.৫৭ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৪.৬৭ শতাংশ খাদে পড়ে, ৬.৫৫ শতাংশ বিবিধ কারণে, ০.৯০ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষ এবং ০.২৩ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে।
পরিসংখ্যানে দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এইমাসে মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৫১.০১ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২২.৫৭ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২১.৮৯ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ২.৪৮ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১.১৩ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ০.৯০ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়।
যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, অভারটেকিং এবং বেপরোয়া গতির ফলে এবং সড়ক নিরাপত্তায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি ও জবাবদিহিতার অভাবে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে। সরকারের আন্তরিকতা ও বিগত নির্বাচনে রাজনৈতিক অঙ্গিকার থাকলেও বর্তমান সরকারের দুটি বাজেটে তার কোন প্রতিফলন ঘটেনি। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেস পদ্ধতি ঢেলে সাজানো ব্যাতি রেখে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
Leave a Reply