নতুন বছরের শুরুতেই চালসহ অন্তত ১০টি পণ্যের দাম বেড়েছে। কমেছে পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের দাম। দাম বাড়া পণ্যের তালিকায় রয়েছে, মাঝারি মানের মশুর ডাল, ব্রয়লার মুরগি, এলাচ, দারুচিনি, জিরা, আমদানি ও দেশি দুই ধরনের আদা, খোলা সয়াবিন তেল, এক লিটার ও ৫ লিটার ওজনের সয়াবিন, পাম খোলা ও পাম সুপার।
শুক্রবার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে চিকন ও মাঝারি চাল কেজিতে ২ টাকা করে বেড়েছে। চালের কেজি প্রায় ৭০ টাকা ছঁইছুঁই। অবশ্য নতুন বছরে মোটা চালের দাম নতুন করে না বাড়লেও তা ৫০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। আর চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকা কেজি দরে। এক সপ্তাহ আগে এই চালের দাম ছিল ৫৮ টাকা কেজি। রাজধানীর যাত্রাবাড়ি এলাকার ব্যবসায়ী বিপ্লব সরকার বলেন, চাহিদার তুলনায় চালের সরবরাহের ঘাটতির কারণে চালের দাম বাড়ছে। আমদানি হওয়া চাল বাজারে আসলে দাম কমবে।
এ প্রসঙ্গে বাদামতলী ও বাবু বাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চালের সরবরাহ বাড়লে দাম কমে আসবে। ধানের দাম বেড়ে যাওয়া এবং বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে উৎপাদন কিছুটা কম হওয়ার কারণে চালের দাম বেড়েছে।’
গত এক সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে জিরা ও দারুচিনির দাম।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দারুচিনি ও জিরার কেজিতে বেড়েছে ৫০-৬০ টাকা করে। খুচরা বাজারে মাঝারি মানের মশুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে মশুরের ডালের দাম ছিল ৮০-৯০ টাকা। ১২০ টাকা কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা কেজি দরে। আদার দাম বেড়েছে কেজি ১০ টাকা করে। গত সপ্তাহে বিক্রি হওয়া ৩২ টাকা হালি ফার্মের ডিম আজ বিক্রি হচ্ছে ২৮ টাকায়।
ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা শুরু হওয়ায় দাম কমতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বেশি। এছাড়া ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমেছে। পেঁয়াজের সঙ্গে নতুন আলুর দামও বেশ খানিকটা কমেছে। তবে পুরনো আলুর দাম বেড়েছে।
রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নতুন দেশি পেঁয়াজে বাজার ভরপুর। আমদানি করা পেঁয়াজও রয়েছে প্রচুর। এতে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪০- ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যদিও এই পেঁয়াজ গত সপ্তাহে ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর আমদানি করা পেঁয়াজ আগের মতোই ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বাজারে শীতের সবজি বিশেষ করে ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মুলা, শালগমের সরবরাহ বেড়েছে। নতুন করে সবজির দাম না কমলেও ক্রেতারা সবজি কিনে স্বস্তি পাচ্ছেন। গত প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ক্রেতারা তুলনামূলক কম দামে সবজি কিনতে পারছেন। শুক্রবার (১ জানুয়ারি) বাজার ভেদে বেশিরভাগ শীতকালীন সবজি ৩০ টাকা কেজিতেই পাওয়া যাচ্ছে।
রাজধানীর মুগদার বাসিন্দা ছাইদুল ইসলাম বলেন, নতুন বছরে সবজির বাজারে স্বস্তি থাকলেও চাল ডালসহ অন্যান্য পণ্য কিনতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। ২০২০ সালের অধিকাংশ সময়ই জিনিসপত্রের দাম বেশি ছিল। অথচ মানুষের আয় বাড়েনি। এ কারণে ২০২১ সালে মানুষ যাতে অস্বস্তির মধ্যে না থাকে, সে জন্য জিনিপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকা জরুরি।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতো শিমের কেজি ৩০-৫০ টাকা। ফুলকপি ও বাঁধাকপির প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকায়। ২০ টাকা কেজি শালগম। মুলা ১০-১৫ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে। ৩০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে বড় লাউ। গাজর বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা কেজি। বেগুনের কেজি ৩০-৪০ টাকা, করলার কেজি ৪০-৫০ টাকা। সব ধরনের শাক বিক্রি হচ্ছে ৫-১০ টাকা আটি।
মানিক নগর বাজারের ব্যবসায়ী আহমেদ খান বলেন, পেঁয়াজের মতোই নতুন আলুর দামও কমে এসেছে। গত সপ্তাহে ৪৫-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া নতুন আলু এখন ৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। তবে দাম বেড়েছে পুরনো আলুর। পুরনো আলু ৪৫-৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন তিনি।
Leave a Reply