1. sylpe2019@gmail.com : Nongartv :
  2. regularmd@gmail.com : Suhag Rana : Suhag Rana
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৫০ পূর্বাহ্ন

হাওরাঞ্চলে নৌ-দুর্ঘটনায় ৩ মাসে ৩৪ মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপডেটের সময় শুক্রবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২১

সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনার হাওরে নৌ-যান চলাচলে নিয়মনীতি না থাকায় ৩ মাসে নৌ-দুর্ঘটনায় ৩৪ জনের মর্মান্তিক প্রাণহানির ঘটেছে। আহত হয়েছেন অনুমানিক কয়েক হাজার মানুষ। গেল বছর জুলাই-সেপ্টেম্বরে নৌ দুর্ঘটনায় ৩৪ জন প্রাণ হারান। বর্ষা মওসুমে ঝড় ঝঞ্জায় উত্তাল হাওরে ও নদী পথে যাতায়াতের ক্ষেত্রে যাত্রীরা থাকেন চরম শংকিত। হাওর পাড়ের মানুষের যাতায়াতের সহজ মাধ্যম নৌযান ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় হাওরে ও নদী পথে প্রতিনিয়তই নৌ-দুর্ঘটনার আশংকা যেন পিছু ছাড়েনা হাওরবাসীর।

সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনা হাওরে গত বছর জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে নৌ দুর্ঘটনায় ৩৪ জনের মর্মান্তিক প্রাণহানীর ঘটনা ঘটছে। জুলাই-আগস্ট মাসে ধর্মপাশা, তাহিরপুর ও ছাতক উপজেলায় নৌকা ডুবে প্রায় ৫ জনের প্রাণহানী হয়েছে। এদের মধ্যে ৩ জন তাহিরপুর উপজেলার। এছাড়াও ৫ আগস্ট নেত্রকোনার মদন উপজেলায় হাওরে নৌকা ডুবে মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকসহ ১৭ জনের প্রাণহানী ঘটে। ৯ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনার মধ্যবর্তী গুমাইনদীতে নৌকা ডুবির ঘটনায় ১২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর থানার ইনাতনগর গ্রামের ৯জন, পাইকুরাটি ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের ২ জন ও নেত্রকোনার মেদনী গ্রামের বাসিন্দা।

সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনার বিভিন্ন উপজেলায় বর্ষাকালে নদী পথে হাওরে যাতায়াতে ও পণ্য পরিবহনে একমাত্র সহজ ব্যবস্থা হিসেবে চলছে ইঞ্জিন চালিত ষ্টীল বডি নৌকা ও কাঠের তৈরী নৌকা। বর্ষা ছাড়াও সারা বছরে জেলার নদী পথে চলে ইঞ্জিন চালিত ষ্টীলবডি বড় বলগেট নামে নৌকা ও যাত্রীবাহী নৌকা। বেশি লাভের আশায় অতিরিক্ত মালামাল নেয়া, পরিবহনে অদক্ষ চালক, অসাবধানতা, অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই, জোড়াতালি দিয়ে ত্রুটিযুক্ত ট্রলার চলাচলের কারণে বিগত কয়েক বছরে এই পথেই পৃথক-পৃথক ২৪ টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৭০ জনের করুণ মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অসংখ্য যাত্রী। তার মধ্যে শিক্ষার্থী, গরীব অসহায় শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যাই বেশী। এই ২৪ টি নৌ-দুর্ঘটনার মধ্যে বেশীর ভাগই কোন প্রাকৃতিক কারণে ঘটেনি বলে জানান হাওরের লোকজন। নৌ-যান চলাচলের নীতিমালা না মানার কারণে আর অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই, জোড়াতালির নৌকা চলাচলের জন্যই বিভিন্ন সময়ে জেলার নদী পথে ও হাওরে এমন দুর্ঘটনা ঘটছে। কোন দুর্ঘটনা ঘটলেই শুরু হয় দৌড়-ঝাঁপ আর উদ্ধার তৎপরতা। জেলায় ও উপজেলা পর্যায়ে উদ্ধার কাজ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় কোন যন্ত্রপাতি না থাকায় উদ্ধার কাজও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়না। নদী পথে নৌযান চলাচলে আইন মানা হচ্ছে কি-না বিআইডব্লিটির দেখার কথা থাকলেও তাদের কার্যক্রম চোখে পড়েনি।

বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে জুন মাসে জেলার ধর্মপাশার শৈলচাপড় হাওরে ট্রলার ডুবে শিশু-নারী ও শিক্ষাথী সহ ১৬ জনের প্রানহানী ঘটে। ২০১১ সালে সেপ্টেম্বরে প্রায় শেষের দিকে জামালগঞ্জের দুর্লভপুর গ্রামে অতিরিক্ত বোঝাইয়ের কারণে ট্রলার ডুবে ৫ শিশুসহ ৮ যাত্রীর প্রাণহানী ঘটে। একই বছর জুন মাসে তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী যাদুকাটা নদীতে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কারণে এক নির্বাচনী প্রার্থীর মৃত্যু হয়। ২০ জুলাই সুরমা নদী পারাপারের সময় নৌকা ডুবে মারা যান ছাতক উপজেলার এক ইউপি সদস্য। একই বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর কাঠইর নদীতে বর যাত্রীবাহী নৌকা ডুবে নববধূসহ ২ জনের করুণ মৃত্যু হয়। ওই বছরেই ১৮ ডিসেম্বর জামালগঞ্জের ফেনারবাঁক ইউনিয়নের ধনু নদীতে কামধরপুর গ্রামের বাঁকে পাথর বাহী বলগেট ও যাত্রীবাহী নৌকার মুখোমুখি সংঘর্ষে ৪২ জনের মৃত্যু ঘটে।

২০১২ সালে ধরমপাশা উপজেলার সোনা মড়ল হাওরে ট্রলার ডুবে ৪ জন যাত্রী মারা যান। একই বছর ১১ জুন সুনামগঞ্জ সদরের উজান রাম নগরের যাত্রীবাহী ট্রলার ডুবে ১ জনের মৃত্যু হয়। ১০ ফেব্রুয়ারী জামালগঞ্জ ও ধরমপাশা উপজেলার মধ্যবর্তী স্থানে ট্রলার ডুবে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৪ সালে ফেব্রুয়ারীতে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় লক্ষ্মীবাউর দোহালিয়ায় সুরমা নদীতে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আগুনে পুড়ে শিশুসহ ১২ জন মারা যান। ফেব্রুয়ারীর শেষের দিকে তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত পাটলাই নদীতে খেয়া পারাপারের সময় ১ শিশুর মৃত্যু হয়। এ ছাড়াও তাহিরপুরের যাদুকাটা নদীতে নৌকা ডুবে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ওই বছরই জুনের মাঝামাঝি তাহিরপুরের পাতারগাাঁও সেতুর পাশে নৌকা ডুবে মা-ছেলে-নানীসহ ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে জেলার মল্লিকপুরে বালু ভর্তি বলগেট নৌকা ডুবে ৩ জন প্রাণ হারান। জুলাই মাসেই শেষের দিকে মধ্যনগর থানার গোমাই নদীতে এক স্কুল শিক্ষক নিহত হয়েছেন। জুন মাসের মাঝামাঝি সুনামগঞ্জের মল্লিকপুর থেকে মোহনপুর আসার পথে রাত ৯টায় বালুভর্তি নৌকার ২ জন ভলগেট নৌকার ধাক্কায় পানিতে ডুবে মারা যান। আগস্টের শেষে দিরাই উপজেলার রফিনগর ইউপির বাংলাবাজার সংলগ্নে নৌকা ডুবে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। অক্টোবরের শেষে তাহিরপুরের সীমান্তে পাটলাই নদীতে নৌকা দিয়ে পারাপারের সময় রাতে এক বিজিবি সদস্য নিহত হন। নভেম্বরের প্রথমার্ধে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই এর কারণে জেএসসি পরীক্ষার্থীসহ প্রায় দেড় শতাধিক যাত্রী নিয়ে নৌকা ডুবির কারণে প্রায় ৪০ জনের মতো আহত হয়। নভেম্বরের মাঝামাঝি ভোরে তাহিরপুরের সীমান্ত রাঙ্গাছড়া নদীতে নৌকার সংঘর্ষে ১ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৫ সালের মাছামাঝি দিরাই চাতল বিলে নৌকা ডুবে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়াও ২০১৭-২০১৮ সালে জেলার বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েক জন নৌ-দুর্ঘটনায় মারা গেলেও নিহতদের সংখ্যা নির্ণয়ে সম্ভব হয়নি। ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বরে দিরাই উপজেলার কারিগুটা হাওরে ট্রলার ডুবিতে ১০ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এ রির্পোট লিখা পর্যন্ত জুলাই-আগস্ট মাসে ধর্মপাশা, তাহিরপুর ও ছাতক উপজেলায় নৌকা ডুবে প্রায় ৫ জনের প্রাণহানী হয়েছে। ৫ আগস্ট নেত্রকোনার মদন উপজেলায় হাওরে নৌকা ডুবে মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক সহ ১৭ জনের মর্মান্তিক প্রাণহানী ঘটেছে। ৯ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনার মধ্যবর্তী গুমাইনদীতে নৌকা ডুবির ঘটনায় ১২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© 2020 Nongartv.com . Design & Development by PAPRHI
Theme Customization By Freelancer Zone