সিলেটে এবার করোনার ভয়াবহ রূপ প্রকাশ পেলো। আক্রান্তের সাথে পাল্লা দিয়ে এবার মৃত্যুর হিসেবের খাতাও ওলট পালট হয়েছে। রোববার সিলেটে একদিনে ১০ জনের প্রাণ কেড়ে নিলো করোনা। সিলেট জেলা ও বিভাগে এক দিনে এটাই সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড।
রোববার দিনের শুরুতে ৮ জনের মৃত্যুর কথা জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ। বিকেলে শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতাল সূত্রে জানা গেলো করোনায় আরো ২ জন মৃত্যুকে বরণ করেছেন। এই ১০ জনই সিলেটে জেলার বাসিন্দা। তাদের নিয়ে বিভাগে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩৪ জনে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথমে সরকারি হাসপাতালে তিনজন ও বেসরকারি হাসপাতালে পাঁচজন মারা যান। সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে মারা যাওয়া ৩ জনের বয়স ৫০ বছরের ওপরে। তাঁরা সবাই করোনা ছাড়াও কিডনি, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছিলেন। শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ২ জন মারা যান। তাদের মধ্যে একজন পুরুষ ও একজন মহিলা। দু’জনেরই বয়স ৫০ ঊর্ধ্ব। মারা যাওয়া একজনের বাড়ি সিলেট জেলায় ও অন্য জনের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলায়।
এদিকে, এ সময়ে বিভাগে করোনা শনাক্ত হয়েছে আরো ৪৫ জনের। বিপরীতে সুস্থ হয়েছেন ১২৯ জন রোগী। নতুন শনাক্তদের মধ্যে ৩৩ জনই সিলেট জেলার বাসিন্দা। এছাড়া সুনামগঞ্জ জেলার ১০ জন এবং হবিগঞ্জ জেলার ২ জন রয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রোববার পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ হাজার ২৩২ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৯৩০ জন, সুনামগঞ্জে ২ হাজার ৭১৪ জন, হবিগঞ্জে ২ হাজার ৩১৫ জন ও মৌলভীবাজারে ২ হাজার ২৭৩ জন রয়েছেন।
সিলেট বিভাগে এ পর্যন্ত ৩৩৪ জন করোনাভারাইরাসে আক্রান্ত রোগী মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে সিলেট জেলায় সর্বোচ্চ ২৬৩ জন, সুনামগঞ্জে ২৬ জন, হবিগঞ্জে ১৮ জন এবং মৌলভীবাজার জেলায় ২৭ জন রয়েছেন।
বিভাগে এ পর্যন্ত ১৮ হাজার ৪৪৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়েছেন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ১১ হাজার ৯৯৯ জন, সুনামগঞ্জের ২ হাজার ৫৮৫ জন, হবিগঞ্জের ১ হাজার ৭৭০ জন এবং মৌলভীবাজার জেলার ২ হাজার ৮৯ জন।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ২৭৮ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে ২৫৫ জন, সুনামগঞ্জের হাসপাতালে ৪ জন, হবিগঞ্জের হাসপাতালে ১৩ জন এবং মৌলভীবাজারের হাসপাতালে ৬ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এদিকে, করোনায় সিলেটে সর্বোচ্চ মৃত্যুর দিনে ভাবিয়ে তুলেছে করোনার ভার ভ্যারিয়েন্ট। এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ করার ক্ষমতা ৩শ গুণ। প্রতিবেশী দেশ ভারতে এটির অসম্ভব রকম সংক্রমণ ঘটছে, হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। ভারতে যে দুটো ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে- ডাবল বা ট্রিপল মিউটেশন ভাইরাস, তা সারাবিশ্বে বিস্ময় হিসেবে দেখা দিয়েছে। ভারতের এই ডাবল কিংবা ট্রিপল মিউটেশন ভাইরাস যেন কোনোভাবেই সিলেট হয়ে দেশে আসতে না পারে সেজন্য সবাইকে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ স্বাস্থ্য বিভাগের। সিলেট বিভাগীয় সাবে সহকারী স্বাস্থ্য পরিচালক মো: আনিসুর রহমান বলেন, এই মুহূর্তে অতি সতর্কতা ছাড়া কোন উপায় নেই। সরকারের সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলে তিনি মনে করেন।
Leave a Reply