স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও তার বিভিন্ন পদের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংশ্লিষ্ট আইনগুলো বাংলায় ভাষান্তর করলেও ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও পদগুলোর নাম প্রচলিত শব্দেই থাকছে। সোমবার আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে কমিশনের সভা শেষে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর এ তথ্য জানান।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে কমিশনের মুলতবি সভায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর ‘নির্বাচন আইন ২০২০’-এর খসড়া কমিশন পর্যায়ে অনুমোদন দেওয়া হয়। এই আইনটিসহ গত সপ্তাহে কমিশন পর্যায়ে অনুমোদন দেওয়া ‘রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন ২০২০’-এর খসড়ায় স্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠানের নাম ও তার পদগুলোর নাম বাংলায় ভাষান্তরের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল কমিশন। আইন দুটি বাংলায় করতে গিয়ে ইসি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও তার পদগুলোর নাম বাংলায় ভাষান্তর করেছিল, যা ছিল অপ্রচলিত।
ইসির সিনিয়র সচিব আলমগীর বলেন, আমরা আইন বাংলায় করলেও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম এবং পদের নাম প্রচলিত শব্দই রাখা হচ্ছে। অর্থাৎ এই আইনের সঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইনে প্রতিষ্ঠান এবং পদের নাম যেভাবে আছে সেটি এখানে থাকবে।
এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, একটি প্রস্তাবনা পর্যায় হয়েছে। আইনের অনেক ধাপ রয়েছে। এটি তার মধ্যে একটি ধাপ। এর পর এটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হবে। জাতীয় সংসদে পাস হবে। ফলে আমরা যা করছি তার কোনোটিই চূড়ান্ত নয়। একটি আইনের যে কোনো পর্যায়ে আরও পরিবর্তন-পরিমার্জন হতে পারে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইন ২০২০-এর খসড়া কমিশন পর্যায়ে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে ইসি সচিব বলেন, কিছু সংশোধনীসহ কমিশন আইনটির খসড়া অনুমোদন দিয়েছে। সংশোধনীগুলো সম্পন্ন করে আমরা মতামতের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করব। রাজনৈতিক দল ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর কাছ থেকে মতামত নেওয়া হবে। সব মতামত বিচার-বিশ্লেষণ করে কমিশন পর্যায়ে এটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে। তার পর আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
এদিকে ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচন পরিচালনা আইন-২০২০’ প্রণয়নে দ্বিমত থাকায় গতকালের কমিশনসভায় উপস্থিত হননি নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। এদিন তিনি নির্বাচন কমিশনেও আসেননি।
এ বিষয়ে ইসি সচিব মো. আলমগীর বলেন, তিনি যেহেতু এর আগের বৈঠকে আইনটি প্রণয়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছিলেন, তাই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। গত ২৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত ৬৯তম কমিশনসভায় নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছিলেন তিনি। ওই সভায় কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি নির্বাচন কমিশন, তাই সভা মুলতবি করা হয়েছিল।
আরপিওতে মৌলিক পরিবর্তন নয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতা বাতিলের যে ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হয়েছে, সেটি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-১৯৭২ থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে না। আরপিও থেকে কোনো মৌলিক বিষয়ই বাদ যাচ্ছে না। মৌলিক বিধানাবলি ঠিক রেখে আইনটি কেবল বাংলায় রূপান্তর করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব।
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, নিজের ক্ষমতা নিজে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কমিশনের কোনো ক্ষমতাই খর্ব করা নয়, বরং যা আছে মৌলিক, তার সবই ঠিক থাকবে। আইনের (আরপিও) মৌলিক কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না, শুধু বাংলায় করা হচ্ছে।
মো. আলমগীর বলেন, প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা বিধিতে রাখতে গিয়ে হয়তো কমিশন আইন থেকে ভুল করে হোক বা বোঝাপড়ার মাধ্যমে হোক সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এটা আইনে থাকবে না, বিধিতে যাবে। আর আইন মন্ত্রণালয় বলেছে যে, প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়টি বিধিতে নয় আইনে রাখতে হবে। তারা এ রকম ৯-১০টি বিষয় আইনেই রাখতে বলেছে।
Leave a Reply