নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জের আলোচিত গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্মম নির্যাতনকারীদের আলোচিত দেলোয়ার ও বাদলকে গ্রেফতার করার পর বেরিয়ে আসছে নানা বর্ণনা।
রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন চিটাগাংরোড এলাকা থেকে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেফতার করা হয় দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারকে। গ্রেফতারকৃত দেলোয়ারের দেয়া তথ্য মতেই ভোর রাত সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকার কামরাঙ্গীচর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় লোমহর্ষক এই ঘটনার মূল আসামি বাদলকে।
এদিকে র্যাব-১১ এর একটি সূত্র জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃত প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, ওই গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে মোবাইলে নির্যাতনের দৃশ্য ধারণ করে টাকা দাবি করেছিল আসামিরা। টাকা না দেয়ার কারণেই সেই ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়া হয়।
অপরদিকে র্যাব-১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন জানান, আমরা নোয়াখালী বেগমগঞ্জ এলাকার একলাসপুর এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে জেনেছি, নির্যাতনের শিকার ওই নারীর প্রায় ১৫ বছর আগে বিয়ে হয়। তার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করার কারণে স্বামীর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছিলেন ওই নারী এবং তিনি তার বাবার বাড়িতেই থাকতেন। কিন্তু কয়েক মাস আগে থেকে স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হওয়ায় ওই নারীর বাড়িতে স্বামীর আসা যাওয়া শুরু হয়।
যেভাবে ঘটনার ছক আঁকে সেই নির্যাতনকারীরা
গ্রেফতারকৃত বাদল ও দেলোয়ার প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, ওই নারীর প্রতি আগে থেকেই কুনজর ছিল তাদের। কিন্তু স্বামীর আসা যাওয়া শুরু হওয়ায় বিষয়টি তারা মেনে নিতে পারেনি। ফলে পরিকল্পনামাফিক তারা ঘটনাটি ঘটানোর একটি ছক আঁকে।
গত ২ সেপ্টেম্বর ওই গৃহবধূর সঙ্গে তার স্বামী দেখা করতে আসলে তাকে অপরিচিত লোক দাবি করে ব্যাভিচারের মিথ্যা অভিযোগ তোলে দেলোয়ার বাহিনী। তার স্বামীকে বেঁধে রেখেই চলে সেই পাশবিক নির্যাতন ও ভিডিও ধারণ।
বিষয়টি জানাজানি যাতে না হয় সেজন্য ওই নারীর পুরো পরিবারকে দেলোয়ার বাহিনী ওই বাসাতেই পরের দিন আটকে রাখে এবং ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। কিছুদিন পর তারা ওই নারীর পরিবারের কাছ থেকে টাকাও দাবি করা শুরু করে। পাশাপাশি গত এক মাস ধরে তারা এ ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে তাকে অনৈতিক প্রস্তাব দিচ্ছিল। অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় একপর্যায়ে সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন জানান, নির্যাতনের ঘটনার ৩৩ দিন পর ১৯ জনকে আসামি করে ৪ অক্টোবর রাত ১টার দিকে ধর্যণের চেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন নির্যাতিতা গৃহবধূ। পাশাপাশি ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে আরও একটি মামলা হয়েছে।
পরে ওই নারী বেগমগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার বরাত দিয়ে সেখানকার ওসি হারুনুর রশীদ জানিয়েছেন, দাম্পত্য কলহের জেরে ওই নারী একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে তার বাবার বাড়িতে থাকছিলেন। দীর্ঘ দিন পর গত ২ সেপ্টেম্বর তার সঙ্গে দেখা করতে সেখানে যান তার স্বামী।
সেদিন রাত ৯টার দিকে আসামিরা তাদের ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকে এবং ওই নারীর স্বামীকে মারধর করে পাশের আরেকটি ঘরে নিয়ে বেঁধে রাখে। পরে তারা ওই নারীকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণের চেষ্টা করে। তাতে বাধা দিলে আসামিরা তাকে নির্যাতন করে এবং মোবাইল ফোনে সেই দৃশ্য ভিডিও করতে থাকে। ওই নারীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে আসামিরা কাউকে কিছু জানালে হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়।
এরপর ওই নারী কাউকে কিছু না জানিয়ে জেলা শহরের মাইজদীতে বোনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানেও আসামিরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং ‘কুপ্রস্তাব’ দেয়। রাজি না হলে সেই রাতের ভিডিও তারা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় বলে মামলায় বলা হয়।
ওই নারী তাদের কথায় রাজি না হওয়ায় আসামিরা রোববার দুপুরে সেই ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দিলে তা ভাইরাল হয়ে যায়।
এই ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলা আছে কি না এবং ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অপসারণে বিটিআরসিকে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য সোমবার সকালে আদালতের কাছে আরজি জানান আইনজীবী মো. আবদুল্লাহ আল মামুন।
আদালত তাকে লিখিত আবেদন নিয়ে আসতে বলে বেলা আড়াইটায় শুনানির জন্য রাখে। দুপুরে শুনানি নিয়ে আদালত এই আদেশ দেয়।
Leave a Reply