রায়হান হত্যার মূল অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) দুপুর দেড়টায় সিলেটের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবুল কাশেমের আদালতে তাকে হাজির করে পিবিআই সিলেটের তদন্ত কর্মকর্তা মো. আওলাদ হোসাইন ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলে আদালত তার ৭ দিনেরই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিলেট চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদলতের পাবলিক প্রসিকিউটর সৈয়দ শামিম।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আকবরকে সিলেটের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবুল কাশেমের আদালতে হাজির করে পিবিআই। এসময় আকবরকে দেখতে জনতার ঢল নামে। এ ঢল সামলাতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশ প্রশাসনকে।
এর আগে গতকাল সোমবার সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে আকবরকে আটক করে পুলিশ। এ নিয়ে রায়হান হত্যা মামলায় মোট ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এদিকে দীর্ঘ প্রায় একমাসের মাথায় প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর গ্রেপ্তার হলেও খুশি রায়হানের পরিবার।
তবে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি ও যাদের নির্দেশে আকবর পালিয়েছিল তাদেরকে আইনের আওতায় আনার দাবি পরিবারের। তাছাড়া স্বীকারোক্তির আগ পর্যন্ত রিমান্ডে রাখার দাবি তাদের।
এদিকে গত রোববার (৮ অক্টোবর) গভীর রাতে ভারতের ডোনা সীমান্ত এলাকার খাসিয়াদের হেডম্যানরা রায়হান হত্যাকাণ্ডের অভিযুক্ত এসআই আকবরকে আটক করে তাদের হেফাজতে রাখেন বলে জানা যায়।
পরে সোমবার দুপুর ১ টার দিকে ভারতীয় খাসিয়ারা আকবরকে বাংলাদেশ সীমান্তে স্থানীয় গরু ব্যবসায়ীসহ লোকজনদের কাছে বুঝিয়ে দেন। খাসিয়ারা বাংলাদেশি লোকের কাছে আকবরকে সমজিয়ে দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়েছে।
পরে এ ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে থানা পুলিশ ও জেলা পুলিশের একটি টিম তাকে জনতার কাছ থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
আকবরকে গ্রেপ্তারের পর কানাইঘাট থানা থেকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে সোমবার (৯ অক্টোবর) সন্ধ্যা পৌনে ৬ টায় জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।
তাকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নিয়ে আসার পর সাংবাদিকদের সাথে প্রেস ব্রিফিংইয়ে মিলিত হন পুলিশ সুপার। এসময় পুলিশ সুপার বলেন, ‘পুলিশের কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মাধ্যমে আকবরকে সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার (৯ অক্টোবর) সকাল ৯ টায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
এরপর রাত আনুমানিক সারে ৭ টায় সিলেট জেলা পুলিশ গ্রেপ্তার আকবর হোসেন ভুঁইয়াকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর কাছে হস্তান্তর করে।
প্রসঙ্গত, গত ১১ অক্টোবর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে গুরুতর আহত হন রায়হান। তাকে ওইদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন বন্দরবাজার ফাঁড়ির এএসআই আশেকে এলাহীসহ পুলিশ সদসরা। সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান রায়হান।
ঘটনার পর পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, নগরের কাস্টঘরে গণপিটুনিতে রায়হান নিহত হন। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় ফাঁড়িতে পুলিশি নির্যাতনে প্রাণ হারান রায়হান।
এ ঘটনায় রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে সিলেট মহানগর পুলিশের তদন্ত কমিটি ঘটনার সত্যতা পেয়ে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবরসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করেন। মামলাটি পুলিশ সদরদপ্তরের নির্দেশে পিবিআইয়ের তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
Leave a Reply