1. sylpe2019@gmail.com : Nongartv :
  2. regularmd@gmail.com : Suhag Rana : Suhag Rana
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৩৭ অপরাহ্ন

সিলেট জেলা পুলিশের কৌশলী জালেই গ্রেফতার হন আকবর

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপডেটের সময় মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর, ২০২০

রায়হানকে হত্যা করে আলোচনায় আসেন বরখাস্তকৃত এস আই আকবর। তারপর পালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে আবারো সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন আকবর। শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার হলেও কোনভাবেই আকবর নিয়ে সমালোচনা যেন বন্ধই হচ্ছেনা। কানাইঘাটের রহিম নামের এক যুবককে আকবরের গ্রেফতারের ক্রেডিট দিতে গিয়েই সমালোচনার মধ্যে যেন কেরোসিন ঢেলে দেয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আকবর গ্রেফতারের মূল পরিকল্পনা ছিলো সিলেট জেলা পুলিশেরই।

জানা যায়, বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্মম নির্যাতনে যুবক রায়হান হত্যার ঘটনায় ফাঁড়ির বরখাস্তকৃত ইনচার্য আকবর হোসেন ভুঁইয়া ঘটনার একমাসের মাথায় এখন পিবিআই রিমান্ডে। সোমবার সন্ধ্যায় আকবরকে গ্রেপ্তার পরবর্তী সিলেট জেলা পুলিশের সংবাদ সম্মেলন শেষে রাত সাড়ে ৭টায় তাকে পিবিআই এর কাছে হস্তান্তর করা হয়। মঙ্গলবার তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পিবিআই।

আলোচনা এখানেই থামতে পারতো। কিন্তু না। সোমবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে আকবরকে গ্রেপ্তারে নিজেদের অবদান ‘যথাসম্ভব’ তুলে ধরেন সিলেটের পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন আহমদ। পুলিশ সুপারের এই ‘যথাসম্ভব’ তুলে ধরার কারণেই নানা প্রশ্নের উদ্ভব। আর কঠোর সমালোচনা তো আছেই। এ সমালোচনা আকবর আটকের বিস্তারিত বলতে না পারার কারণেই। বিস্তারিত বলা সম্ভবও না। কারণ, পুলিশ সুপার একটা রাষ্ট্রীয় পরিচয় বহন করেন, যেখানে আইনি কিছু বাধ্যবাধকতা তাকে মানতেই হয়।

এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় সিলেট জেলা পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন আহমদ প্রেস কনফারেন্সে বলেন, ‘জেলা পুলিশ বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে আকবরকে আটক করেছে এবং পুলিশের কিছু বিশ্বস্ত বন্ধু আকবরকে আটকে সহায়তা করেছে।’ সমালোচনার শুরু তখন থেকেই। কারণ, মানুষ পূর্বে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখে খাসিয়ারা আকবরকে আটক করে। এছাড়া ভাইরাল হওয়া জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টিও মানুষের মাঝে মুখরোচক আলোচনার জন্ম দেয়।

এছাড়া মানুষের উত্তপ্ত সমালোচনার মাঝে ঘি ঢালে একটি অনিবন্ধিত ইউটিউব চ্যানেলের লাইভ। যেখানে পুলিশের সোর্স কর্তৃক নিয়োগ করা আব্দুর রহিম নামের এক ব্যক্তিকে দেখানো হয় আকবর আটকের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে। আর লাখ টাকা পুরস্কারের লোভে সেই রহিমও নিজেকে আকবর আটকের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে তুলে ধরে।

তবে সমালোচনা যখন শুরু হয় তখন আকবর গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে আলাদা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সিলেট জেলা পুলিশ। যেখানে বলা হয়-

“সোমবার (৯ নভেম্বর) সকাল আনুমানিক ৯ টার সময় সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলার বাংলাদেশ- ভারত সীমান্তবর্তী ‘ডুনা’ এলাকা থেকে বরখাস্তকৃত এসআই আকবরকে সিলেট জেলা পুলিশ গ্রেফতার করে। আসামি গ্রেফতারের ক্ষেত্রে পুলিশ বিভিন্ন সময়ে বিশ্বস্ত সোর্স কিংবা মাধ্যম ব্যবহার করে থাকে যারা আসামির অবস্থান এবং চলাফেরা সম্পর্কে তথ্য দিয়ে থাকেন। এসআই আকবরের গ্রেফতারের ক্ষেত্রেও সিলেট জেলা পুলিশ একইভাবে একাধিক সোর্স এবং মাধ্যম ব্যবহার করেছে যারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে তার গ্রেপ্তারে সহায়তা করেছেন। কৌশলগত কারণে সোর্স এবং মাধ্যম সম্পর্কে কোন তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয় না। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে কেউ কেউ বিষয়টাকে ভিন্ন ভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছেন, যা কাঙ্ক্ষিত নয়। সিলেট জেলা পুলিশ সবসময়ই জনগণের আস্থা এবং আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সেবা প্রদান করে থাকে। এ বিষয়ে সকলের সহায়তা একান্তভাবে কাম্য।”

বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করলেও সেই আইনি বাধ্যবাদকতায় এখানেও তুলে ধরতে পারলেন না এসআই আকবর আটকের নেপথ্যের গল্প এবং অনেক অজানা কাহিনী।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারত থেকে আকবরকে ধরে নিয়ে আসার দায়িত্ব পাওয়া আব্দুর রহিমসহ সীমান্তবর্তী আরো কয়েকজন ছিল পুলিশের বিশ্বস্ত বন্ধু। তাদের উদ্দেশ্য করেই এসপি ফরিদ উদ্দিন বক্তব্য দিয়েছিলেন। বলেছিলেন- ‘জেলা পুলিশ বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে আকবরকে আটক করেছে এবং পুলিশের কিছু বিশ্বস্ত বন্ধু আকবরকে আটকে সহায়তা করেছে।’

শুধু তাই নয় অনুসন্ধানে উঠে আসে আকবর গ্রেপ্তারের পেছনের গল্প। যা থেকে জানা যায়, রায়হানের খুনী এসআই আকবর ভুইয়া ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর শিলচরের একটি বাসায় বসবাস করতে থাকেন। যখন তিনি জানতে পারেন তাকে আটক করতে সোর্স নিয়োগ করা হয়েছে। তখন তিনি শিলচর থেকে গুহাটি যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন। এসময় শিলচরে থাকা কানাইঘাট থানা পুলিশের সোর্স তাকে ১ লক্ষ টাকা চুক্তিতে শিলচর থেকে গুহাটি নিতে রাজি হন। কিন্তু গুহাটি না নিয়ে ওই সোর্স রোববার কানাইঘাট সুরইঘাট সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করে। কিন্তু সুরইঘাট সীমান্তে বিএসএফ এর কড়া নিরাপত্তা থাকায় রোববার তাকে বাংলাদেশে আনতে পারেননি। পরদিন সোমবার ডনা সীমান্ত দিয়ে আকবরকে আব্দুর রহিমের কাছে হ্যান্ডওভার করেন ওই সোর্স।

আরো জানা যায়, আকবরকে গ্রেপ্তারে এসপি ফরিদ উদ্দিনের নির্দেশে কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করেন দুই থানার ওসি। তখন কানাইঘাট সীমান্তে সোর্স হিসেবে শাহাব উদ্দিনকে নিয়োগ দেন ওসি শামসোদ্দোহা। শাহাব উদ্দিন স্থানীয় সালেহ আহমদকে এ ব্যাপারে সহযোগীতা করার জন্য বলেন। ডোনা এলাকার খাসিয়াদের সাথে রহিমের ভালো সম্পর্ক থাকায় সালেহ আহমদ চুক্তিতে আব্দুর রহিমকে নিয়োগ দেন। কানাইঘাট থানার ওসির পরামর্শক্রমে শাহাব উদ্দিন ও সালেহ আহমদের নির্দেশে আকবরকে খাসিয়া সীমান্তে এনে আব্দুর রহিমের কাছে হ্যান্ডওভার করেন শিলচরে থাকা ওই সোর্স। এরপর আব্দুর রহিম জেলা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন আকবরকে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশিত ভিডিওটিতে দেখা যায়, একটি পাহাড়ি ছড়ায় পাথরের উপর আকবর হোসেনকে বসিয়ে রেখে হাত-পা বাঁধছেন কয়েকজন যুবক। এ সময় চারপাশ ঘিরে রাখেন স্থানীয় কিছু মানুষ। তার পায়ে রশি বাঁধা ছিল। সেই বাঁধন খুলে আকবরের বাহু বাঁধছিলেন যুবকরা।

এসময় ওই যুবকদের একজনের কাছে একটি ফোন আসে ফোনটি সাদা গেঞ্জি পড়া যুবকের কাছে এনে দেন অপর যুবক সাদাগেঞ্জী পড়া ওই যুবক (বাংলাদেশী রহিম উদ্দিন) ওপর প্রান্ত কথা বলা লোককে সালেহ বলে সম্বোধন করেন এবং বলেন ‘ওসি স্যারকে বলে দাও আমি তাকে পাইছি লইয়া রওয়ানা দিরাম। সে আমার সাথে আছে। আমার নেট নাই।’ এ কথা বলেই লাইন কেটে দেন রহিম উদ্দিন। মূলত রহিম উদ্দিন পুলিশের প্রধান সোর্স সালেহ আহমদকে ফোনে এসব কথা বলেছিলেন।

শুধু তাই নয়, পুলিশের সোর্সের সহায়তায় যে খাসিয়া হেডম্যানের মাধ্যমে আকবরকে আটক করা সম্ভব হয়েছে তারও একটি ভিডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে। যেখানে পুরো বিষয়টি একেবারে পরিস্কার।

প্রসঙ্গত, সিলেটের পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় কানাইঘাট থানার ওসি সামসুদ্দোহা ও ২নং লক্ষীপ্রসাদ ইউপি চেয়ারম্যান জেমস লিও ফার্গুশন নানকার একান্ত প্রচেষ্টায় গ্রেপ্তার করা হয় আকবরকে। তবে দুই দেশের সীমান্ত আইন ও নানাবিধ জটিলতার কারণে সিলেট জেলা পুলিশ ও কানাইঘাট থানা পুলিশ কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

এদিকে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে- আকবর ভারতে আটকের বিষয়টি পুলিশের বক্তব্যে উঠে না আসা নিয়ে। কিংবা কেন বলা হলো- বাংলাদেশ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এমন বক্তব্য কেন?

তবে পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে- আকবর গ্রেপ্তারে ফাঁদ পেতেছিল জেলা পুলিশ। সেই ফাঁদেই আটকা পড়ে আকবর। এখানে বাংলাদেশ-ভারতে একটা বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশ একটা রাষ্ট্রীয় পরিচয় বহন করে এবং বক্তব্যের ক্ষেত্রে আইনি কিছু বাধ্যবাধকতা তাদেরকে মানতেই হয়। এছাড়া রয়েছে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি। যেখানে চাইলেই সবকিছু বলা সম্ভব না। আর আইনি প্রক্রিয়ায় আকবরকে ফেরাতে চাইলে সেখানে দীর্ঘদিন সময় ব্যয় করা লাগতো। মূল কথা- আকবরকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে, এটাই সুখের বিষয়।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© 2020 Nongartv.com . Design & Development by PAPRHI
Theme Customization By Freelancer Zone