আমাদের দেশে প্রবাসীদের বলা হয় হয় রেমিট্যান্স যোদ্ধা। প্রবাসীর রক্তভেজা ঘামের টাকায় না-কি সচল থাকে দেশের অর্থনীতির চাকা।
সাধারণ মানুষের পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও সংবেদনশীল- সহমর্মি প্রবাসীদের কল্যাণে।
কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এতোদিন প্রবাসীরা আমাদের দিয়েছেন এবার আমরা তাদের দেবো।
করোনা মহামারীতে কর্মহীন হয়ে দেশে ফেরত প্রবাসীদের সরকারের পক্ষ থেকে ১৩ হাজার টাকা করে প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দিতে গিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।
মাত্র ১৩ হাজার টাকায় বাংলাদেশে কি এমন করা যায় তা আমার বোধগম্য নয়।
তারপরও আশ্বাস শুনতে খারাপ না ভালোই লাগে,প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণি পাড় হওয়া নেতা দেখে আমাদের বেড়ে ওটা, এসব কথায় আশ্বস্ত না হলেও বিনোদিত হই খানিকটা।
প্রধানমন্ত্রী অনেক উদ্যোগ নিলেও মাঠপর্যায়ে তা পৌছার আগে শকুনের পেটে সব চলে যাওয়ার নজির কম নেই আমাদের দেশে।
তবুও প্রধানমন্ত্রীকে একটা ধন্যবাদ না হয় দিলামই উনার এই অমৃতবাণী শুনে।
আমিওতো একজন প্রবাসী,রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তি স্বীকারতো করেছেন প্রবাসীরা দেশকে অনেক দিয়েছে,একটু তৃপ্তির ঢেঁকুর আমরা নিতেই পারি।
ভিশন ২০২১ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রলোভনে আকৃষ্ট জাতি কতটা ডিজিটাল হয়েছে সে প্রশ্ন করবোনা।
হাতের মুঠোয় মোবাইল ফোন নিয়ে মুহুর্তেই বিশ্বের নানা প্রান্তের খবর জানা অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে,কম্পিউটারের ডাটা ব্যাজে বাংলাদেশের গুরত্বপূর্ণ সব তথ্য,নাগরিকদের পরিসংখ্যান সংরক্ষণ করে রাখা,গুগলে ঢুকেই অজানা সকল প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নিতে পারছে প্রজন্ম।
আপনি কিছু শিখতে চাচ্ছেন কিন্তু হাতে সময় নেই, ইউটিউব ঘাটলেই আপনি পেয়ে যাচ্ছেন সব ধরনের টিউটোরিয়াল ভিডিও, কি শিখতে চান কি জানতে চান সবই আপনার কাছে পৌঁছে দিবে ইউটিউব।সকালের নাস্তার সাথে পত্রিকার অপেক্ষায় থাকাটা অনেকটাই বিলীন হয়ে গেছে অনলাইন নিউজের মাধ্যমে।
কখন কি ঘটছে তা জানার জন্য আপনাকে অপেক্ষা করতে হচ্ছেনা পরদিন সকাল অবধি।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক সেক্ষেত্রে আরও এগিয়ে,ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াগুলো খবর সংরক্ষণে বিলম্ব করতে পারে কিন্তু আপনার যদি ফেইসবুকে একটি একাউন্ট থাকে মুহুর্তে আপনি পেয়ে যেতে পারেন সকল তথ্য।
দূর প্রবাস থেকে মা-বাবা স্ত্রী সন্তানের সাথে কথোপকথনের জন্য আর অডিও ক্যাসেট ব্যবহার করতে হয়না।
আধুনিকতার স্পর্শে নিমিষেই দেখা হয়ে যায় মায়ের নিস্পাপ মুখ,সন্তানের মুখে নির্মল হাসি,প্রিয়তমা স্ত্রীর অপেক্ষয়মান চাতক চোখ।
কয়েকটি বাটন টিপেই ব্যবসায়িক লেনাদেনা সহজলভ্য হয়েছে।কাগজের পাতা নিয়ে (চ্যাক নিয়ে) ব্যাংকে দীর্ঘ লাইন ধরতে হয়না আপনার সঞ্চিত-রক্ষিত অর্থ উত্তোলনে,এটিম মেশিনের মাধ্যমে ২৪ ঘন্টাই আপনি পাচ্ছেন ব্যাংকিং সেবা।মোবাইল ব্যাংকিং সেবাতো পৌঁছে গেছে মানুষের দোরগোড়ায়।
বৈশ্বিক মহামারী করোনা এসে বুঝিয়ে দিয়েছে তথ্য প্রযুক্তিতে বিশ্ব কত এগিয়ে গেছে, সাথে আমরাও।
দেশ এগিয়েছে অনেক কিন্তু আমাদের চিন্তা-চেতনা মননের বিকাশ কতটুকু হয়েছে বলা মুশকিল।
ডিজিটাল বাংলাদেশ কার স্বপ্ন ছিলো সে তর্কে যাওয়া অনর্থক, আধুনিক বিজ্ঞানে বিশ্বের সাথে সমান্তরালে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।আমাদের স্যাটেলাইট পৌঁছে গেছে মহাকাশে, মেট্রোরেল তৈরি হয়েছে যানজট নিরসনে।
কত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে দেশ-ভাবতেই ভালো লাগে।
উপরের কথাগুলো আমার লেখনীর সাথে প্রাসঙ্গিক নয় তবে কিছুটা সামঞ্জস্যপূর্ণ।
একজন প্রবাসী হিসেবে অনেকটা আক্ষেপ আর ব্যতিত চিত্তে আজ কিছু কথা লিখতে হচ্ছে।
২০২০-২১ অর্থবছর শেষে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা টাকার হিসাবে দুই লাখ ১০ হাজার ৬১০ কোটি টাকার বেশি। অর্থবছরের হিসাবে একসঙ্গে এত পরিমাণ রেমিট্যান্স এর আগে দেশে আসেনি।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ (২৯ জনু পর্যন্ত) ৪৬ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় চার হাজার ৬০৮ কোটি ডলার, যা টাকার হিসাবে তিন লাখ ৯১ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা। এ বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে দেশের ১১ মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। সোমবার (৫ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
একসাথে এতো রেমিট্যান্স আসাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন রাষ্ট্রের অর্থনীতিবিদগণ।প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে একজন প্রবাসী হিসেবে সেটা আমার জন্যেও গৌরবের।
কিন্তু আক্ষেপটা কেনো সেটাওতো ব্যাখা করা উচিৎ
উপরে উল্লেখ করেছি
২০২০-২১ অর্থবছর শেষে (৫ জুলাই পর্যন্ত তথ্য) ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা বাংলাদেশের টাকার হিসাবে দুই লাখ ১০ হাজার ৬১০ কোটি টাকার বেশি।
বাংলাদেশের রেমিট্যান্সের দুই তৃতীয়াংশ আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী রেমিট্যান্স প্রেরণের দিক দিয়ে প্রথম স্থানে আছে সৌদি আরব,২য় স্থানে ছিলো সংযুক্ত আরব আমিরাত এখন আমিরাতকে ছাড়িয়ে ২য় স্থানে চলে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।
প্রায় ৫ মাস ধরে আমিরাত প্রবাসীরা দেশে ছুটিতে গিয়ে আটকা পড়েছেন অথচ টিভি মিডিয়ায় বক্তব্য দেওয়া ছাড়া সরকারের কোনো উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ নেই তাদের কাজে ফেরত পাঠাতে।
অনেকের ভিসার মেয়াদ চলে যাওয়ায় করোনার প্রথম ধাপেই নানা জটিলতায় আমিরাত ফিরতে পারেননি।
সেই সময় বিশ্বব্যাপী একটা স্থবির পরিস্থিতি বিরাজমান ছিলো, পুরো বিশ্ব একে অন্যের থেকে আলাদা হতে বাধ্য হয়েছিলো, ধিরেধিরে করোনা পরিস্থিতি সামলে বিশ্ব আবার স্বাভাবিক হওয়ায় সবার জন্য আকাশ পথ উন্মুক্ত হয়েছে।
চলতি বছরের শুরতে বাংলাদেশে করোনা মহামারী প্রকট হয়ে উঠে,আশংকাজনক পরিস্থিতি উপলব্ধি করে আমিরাত সরকার বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান-নেপাল শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের আমিরাতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
আটকে পড়েন আমিরাত প্রবাসী কয়েক হাজার বাংলাদেশী, গুনতে থাকেন অপেক্ষার প্রহর।
স্বপ্ন সময়ের জন্য ছুটিতে যাওয়া অনেকেই পড়েন বিপাকে।
এক মাস দু মাস করে পাঁচ মাস হতে চললো আমিরাতে ফিরতে পারছেননা প্রবাসীরা।
ফলে অনেকেই হচ্ছেন ক্ষতির সম্মুখীন, কেউ কেউ চাকরি হারানোর আশংকায়,কারো কারো ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় পড়তে পারেন বিড়ম্বনায়।
আমিরাতে যাদের ব্যবসা বানিজ্য করছেন তাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা আরও প্রকট,ব্যবসায়িক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল তাদের মাঝে। এই সময়ের মধ্যে যদি কারো ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ চলে গেলে পড়তে হবে বাড়তি ঝামেলায়।হাজারো সমস্যার কথা চিন্তা করে আটকে পড়া আমিরাত প্রবাসীদের মনে প্রতিনিয়ত উদ্বেগ উৎকন্ঠা বাড়ছে।
এই দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হতে কালক্ষেপণ হওয়ার কথা নয় যদি রাষ্ট্র একটু আন্তরিক হতো।
আমিরাত সরকার ইতিমধ্যে তাদের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে, শর্ত সাপেক্ষে আমিরাত প্রবেশ করছেন অন্যান্য দেশের নাগরিকরা।
কেবল এয়ারপোর্টে রেপিড পিসিআর টেস্ট ব্যবস্থা না থাকায় আসতে পারেছেন না আমাদের দেশের প্রবাসীরা।
বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা দেশে পাঠিয়ে যারা দেশের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন তাদের জন্য সরকার ১৫-১৬ লক্ষ টাকা ব্যয় করে এয়ারপোর্টে রেপিড পিসিআর টেষ্টের ব্যবস্থা করতে পারছেনা, এটা কি বেদনাদায়ক নয় আমাদের জন্য?
একদিকে হার ভাঙা খাটুনি খেটে দেশে রেমিট্যান্স পাঠায় প্রবাসীরা অপরদিকে আবার এই রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছেন দেশের গুণধররা,এদের জন্য সরকারের কত সুযোগ সুবিধা বিদ্দমান।
লজ্জা করেনা রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদের যাদের পাঠানো টাকায় দেশের রিজার্ভ বাড়ছে সেই সব রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের ১৫-১৬ লাখ টাকায় রেপিড পিসিআর টেস্ট স্থাপন করে কর্মস্থলে ফেরত পাঠানোর দাবী নিয়ে আন্দোলন করতে হয়।
আমাদের দূর্বল পররাষ্ট্রনীতি সে অপবাদ দিবোনা, সরকারকে প্রশ্ন রাখতে চাই বিশ্বের সকল দেশের নাগরিক আমিরাত প্রবেশ করতে পারে সহজে তবে আমাদের দেশের আটকে পড়া প্রবাসীদের আমিরাতে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিচ্ছেনা কেনো সরকার। এটা কী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে ধরে নিবো আমরা?
ইতিমধ্যে আমিরাত সরকার নির্দিষ্ট কিছু শর্ত সাপেক্ষে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে সকল দেশের জন্য ভিজিট ভিসাও উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
যারা করোনার ভ্যাক্সিন দুই ডোজ সম্পন্ন করেছেন কেবল তারাই আমিরাতে প্রবেশের অনুমতি পারবেন।
সেই সাথে তাদের অন্যতম শর্ত আমিরাতের রেসিডেন্সি ভিসাধারী কিংবা ভিজিট ভিসায় প্রবেশ করতে হলে এয়ারপোর্টে রেপিড পিসিআর টেস্ট বাধ্যতামূলক।
অন্যান্য দেশগুলো এই শর্ত মেনে এয়ারপোর্টে রেপিড পিসিআর টেস্ট চালু করে সে দেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের কর্মস্থলে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে।
যে পাকিস্তানকে নিয়ে আমাদের দেশে অনেকে উপহাস করেন সেই পাকিস্তান সরকার মাত্র দুই দিনে তাদের এয়ারপোর্টে রেপিড পিসিআর ল্যাব স্থাপন করে ফেলেছে।
আর আমাদের দেশে এয়ারপোর্টে রেপিড পিসিআর টেষ্ট মেশিন বসানোর উদ্যোগতো নেইই বরং উলটো সরকারের দায়িত্বশীলদের উদাসহীন মনোভাবই প্রতিফলিত হচ্ছে।
এক মন্ত্রণালয় অন্য মন্ত্রণালয়ের উপর দায় চাপানো আমাদের দেশের পুরনো কালচার এ থেকে বেড়িয়ে আসতে চান না রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকেরা।
যে রেমিট্যান্স যোদ্ধারা দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছেন তাদের ব্যাপারে রাষ্ট্র বরাবর নেতিবাচক,রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্টানে কাজ করা কর্মচারীদের ধারণা মধ্যপ্রাচ্যের লোকগুলো কেবলমাত্র লেবার বা দিনমজুর শ্রমিক,সম্মান আর শ্রদ্ধা তাদের প্রাপ্য নয়।
প্রবাসীদের এয়ারপোর্টে হয়রানী সেতো আমলাদের রুটিন ওয়ার্ক, শিক্ষিত জ্ঞানপাপীরা হয়তো বা জানেননা মধ্যপ্রাচ্যের হাজার হাজার বাঙালি অত্যন্ত সম্মানের সাথে এই দেশে ব্যবসা বানিজ্য করছে,এই দেশগুলোতে অনেক বড় বড় প্রতিষ্টানের কর্ণধার বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করছে।
এই সব দেশের সম্মানিত ব্যক্তিদের সাথে চলাফেরা করেন।
বছর শেষে হাজার হাজার কোটি টাকা রেমিট্যান্স শুধু দিনমজুরি করে যায়ন।
জেনে রাখুন মধ্যপ্রাচ্যে ৪৫-৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রার প্রখর-রোদ্দুরে যেমন দিনমজুরের কাজ করে মানুষ তেমনিভাবে হাজার হাজার বাঙালি অনেক বড়ো বড়ো কোম্পানি গড়ে তোলেছে বলে মাসে মাসে কাড়ি কাড়ি টাকা যাচ্ছে দেশে।
আপনারা কি জানেন শুধু ২০-২১ অর্থবছর নয় ১৯-২০ অর্থবছরেও রেকর্ড পরিমান রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে এই প্রবাসী যোদ্ধারা।
যার পরিমান ছিলো এক হাজার ৮২০ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স।
যা সে সময় পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি।
আরেকটু পিছুনে মনে করিয়ে দেই এই প্রবাসীরা ২০১৮-২০১৯ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে এক হাজার ৬৪২ কোটি ডলার।
হিসেব রাখেন কী এসবের, হিসেব রাখার কথাও নয় আপনাদের।
মধ্যপ্রাচ্য থেকে কোনো প্রবাসী দেশে গেলে ভাবেন একজন কামলা/দিনমজুর এসেছে,যাচ্ছে তাই ব্যবহার করেন এয়ারপোর্টে অথচ প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ দিয়েই মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ।
দেশে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আছে,প্রবাসী কল্যান মন্ত্রণালয় আছে,বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আছে তবুও প্রবাসীদের দুঃখ লাগবের উদ্যোগ নেই।
এয়ারপোর্টে হয়রানী বাদই দিলাম, বিমান ভাড়ার কথা যদি বলি সেটাও অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় কয়েকগুন।
গলায় ছুড়ি লাগিয়ে যেনো প্রবাসীদের কষ্টার্জিত টাকা শুষে নিচ্ছে বাংলাদেশ বিমান।
টিকেট কাটতে গেলে সিট পাওয়া না গেলেও বছর শেষে শুনতে হয় বাংলাদেশ বিমানের হাজার কোটি টাকা লস।
আমাদের পাসপোর্ট বিড়ম্বনা দেশে যেমন বিদেশেও তেমন।
প্রবাসীদের দ্রুত পাসপোর্ট নবায়ন করে দিতেও অক্ষম দূতাবাসগুলো।
দূতাবাস থেকে কোনো আইনি সহায়তা পেতেও পোহাতে হয় দূর্ভোগ।
এসব কিছু নিয়ে লিখতে গেলে রচনা আরও বড়ো হয়ে যাবে।
সব প্রসঙ্গ ছুড়ে ফেলে বর্তমানে আমিরাত প্রবাসীরা যে সমস্যার সম্মুখীন সেটা লাগব করার উদ্যোগ নেওয়া হউক সরকার থেকে এটাই আমাদের চাওয়া ।
শুরুতেই ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা উল্লেখ করে যে ফিরিস্তি লিখেছি তার কারণ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের হটকারি বক্তব্য-
এক মন্ত্রণালয় অন্য মন্ত্রণালয়ের ঘাড়ে চাপানোর পুরোনো নীতিতে চাপা পড়ে আছে হাজার হাজার আমিরাত প্রবাসীর কর্মস্থলে ফিরে যাওয়া।
আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলো দ্রুত সময়েই এয়ারপোর্টে রেপিড পিসিআর ল্যাব স্থাপন করতে পেরেছে, তবে আমরা কেনো পারছিনা?
এটা আমাদের দেশের অক্ষমতা নয়, কতিপয় কর্মকর্তাদের উদাসীনতা বা আন্তরিকতার অভাব।
সিভিল অ্যাভিয়েশনের একজন কর্মকর্তা বলছেন এয়ারপোর্টে নাকি এই ল্যাব স্থাপনের জায়গাই নেই,স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লোকজন বলছে এতে না-কি সময় লাগবে এক মাস।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বলছে তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে চিঠি দিয়েছেন জবাব এলে ব্যবস্থা নিবেন।
যদি প্রয়োজন হয় তাহলে না-কি রেপিড পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হবে।
হাজার হাজার প্রবাসী মানবান্ধন করছে,স্মারক লিপি দিচ্ছে প্রবাসে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা নিতে অথচ উনারা এখনো প্রয়োজন মনে করছেন না।
আমরা প্রবাসরাই হয়তো হতোভাগা বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা দেশে পাঠিয়ে দেশের কাছ থেকে ১৫-২০ লাখ টাকার সুবিধা নিতেও রাজপথে নামতে হয়,মন্ত্রণালয়ে ধর্না দিতে হয়।
ডিজিটাল বাংলাদেশে গৌরব এখানেই ম্লান।
যে রাষ্ট্র একটি পিসিআর ল্যাব বসাতে হিমশিম খায়, এক মাস সময় লাগবে বলে, সেই রাষ্ট্র কতটুকু এগিয়েছে এই প্রশ্নের জন্ম যারা দেয় তাদের বিচার কি রাষ্ট্র করবে?
লেখক- কবি ও সমাজকর্মী
সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী
Leave a Reply