চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিরোধিতা যখন দিনের পর দিন বাড়ছে, তখন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ওয়াশিংটনকে লক্ষ্য করে বৃহস্পতিবার দীর্ঘ যে বিবৃতি দিয়েছেন, সেটা কিছুটা বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে।
তিনি বলেছেন, ১৯৭৯ সালে নতুন করে কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরুর পর দুই দেশের সম্পর্ক এতটা খারাপ এবং বিপজ্জনক আর কখনোই হয়নি।
কিন্তু এই উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি তিনি এই পরিণতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেন। ওয়াশিংটনে বর্তমান প্রশাসন চীন বিষয়ে যে কৌশল নিয়েছে তা একেবারেই ভ্রান্ত ধারণা এবং মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে তৈরি বলে ওয়াং ই।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান মার্কিন প্রশাসন ব্যাপারটিকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে, যে কোনো চীনা বিনিয়োগের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে, বিদেশে যে কোনো চীনা ছাত্র একজন গুপ্তচর, এবং প্রতিটি সহযোগিতার পেছনে চীনের কোনো না কোনো দুরভিসন্ধি রয়েছে।
ওয়াং ই আরো বলেন, যেটা সত্য তা হলো চীন কখনোই বিশ্ব পরিসরে যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করতে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে হটিয়ে তার জায়গা নিতে আগ্রহী নয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে চীনের নীতি একই রকম এবং তা বদলায়নি। চীন চায় বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতি যেন ‘সহযোগিতার সম্পর্কের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে।
তিনি বলেন, অমি আশা করি যুক্তরাষ্ট্র ঠাণ্ডা মাথায় চীনের ব্যাপারে নিরপেক্ষ, বাস্তবমুখী এবং যৌক্তিক নীতি নেবে। চীন সর্বদা কথা বলতে প্রস্তুত যদি ওয়াশিংটন সত্যিকার তা চায়।
আপসের বার্তা, নাকি অন্য উদ্দেশ্য?
ট্রাম্প প্রশাসন এবং পশ্চিমা কিছু মিত্র দেশ যখন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে চরম উদ্ধত এবং উচ্চাভিলাষী বলে তুলে ধরার অব্যাহত চেষ্টা করে চলেছে, সে সময় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে এ ধরনের আপসমুলক বক্তব্য কেন – তা নিয়ে বিশ্লেষণ শুরু হয়ে গেছে।
হংকং-ভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দ্য সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে দেওয়া এক মন্তব্যে সেখানকার চীনা অ্যাকাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্সের মার্কিন-চীন সম্পর্কের গবেষক লু শিয়াং বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই সম্ভবত চীনা পররাষ্ট্র এসব বক্তব্য দিচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের আগে চীন ওয়াশিংটনকে কিছুটা শান্ত করতে চাচ্ছে। চীনের এই বার্তার লক্ষ্য মার্কিন ভোটার ছাড়াও মার্কিন নীতি নির্ধারকরাও। তাদেরকে চীন বলতে চাচ্ছে, শত্রুতার পারদ না বাড়িয়ে চীনের সাথে সহযোগিতা করলে তাতে যুক্তরাষ্ট্রের লাভ হবে, মার্কিন অর্থনৈতিক পুনরুত্থান অনেক সহজ হবে।
কুয়ালালামপুরে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব চায়নার অধ্যাপক ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি হওয়ার খায়েশ চীনের নেই বলে যে বক্তব্য চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিয়েছেন তা মিথ্যা নয়।
তিনি আরো বলেন, ১৯৭১ সাল থেকে চীনের নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকদের সবসময় এই বার্তাই দিয়েছেন। তারা বলেছেন, আমরা তোমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী নই, আমরা আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন চাই, এবং সেই সাথে সমান মর্যাদা চাই’ … ওয়াং ই গতকাল তারই পুনরাবৃত্তিই করেছেন।
সূত্র : বিবিসি বাংলা
Leave a Reply