ভোট ডাকাতির ২ বছর উপলক্ষে দেশব্যাপী কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাম গণতান্ত্রিক জোট সিলেট জেলা শাখার উদ্যোগে কালো পতাকা মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে মিছিল শুরু হয়ে কোর্ট পয়েন্টে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।
সিলেট জেলা বাম গণতান্ত্রিক জোট ও বাসদ সমন্বয়ক আবু জাফর সভাপতিত্বে ও সিপিবি নেতা নিরঞ্জন দাশ খোকনের পরিচালনায় সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন বাসদ (মার্কসবাদী) জেলা আহ্বায়ক উজ্জ্বল রায়, সিপিবি সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আনোয়ার হোসেন সুমন, ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) জেলা আহ্বায়ক সিরাজ আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক ডা. হরি ধন দাস, বাসদ (মার্কসবসদী) নেতা এডভোকেট হুমায়ুন রশীদ শোয়েব, বাসদ নেতা প্রণব জ্যোতি পাল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট মহানগর শাখার সভাপতি সনজয় কান্ত দাশ, ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি সরোজ কান্তি, ছাত্র ফ্রন্ট আহ্বায়ক সনজয় শর্মা প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সারাদেশ ও জাতি আজ এক কঠিন দু:সময় অতিবাহিত করছে। রাষ্ট্র ক্ষমতায় গায়ের জোরে বসে আছে এক ফ্যাসিবাদী দানব। গত ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর দিনের ভোট রাতে সিল মেরে জনমত ও সমর্থন বিহীন এক অবৈধ সংসদ ও সরকার গঠন করেছে, যা দুই বছর পার করছে। এরই মধ্যে সারা দুনিয়া করোনা মহামারীতে ক্ষতবিক্ষত। ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ সনাক্ত হওয়ার পর ১০ মাসে প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ করোনা আক্রান্ত এবং ৭ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে আরও সম সংখ্যক মানুষ। শীতের শুরুতে দ্বিতীয় ঢেউয়ে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু ক্রমাগত বাড়ছে। হাসপাতালগুলোতে শয্যা, আইসিইউ এবং ভেন্টিলেটর সংকট দেখা দিয়েছে, অথচ সরকার নির্বিকার। করোনা মোকাবিলায় সরকার চরমভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভঙ্গুর দশা প্রকটভাবে উন্মোচিত হয়েছে। করোনাকালেও ত্রাণ চুরি, মাস্ক, পিপইি, করোনা ভুয়া রিপোর্টসহ স্বাস্থ্যখাতে সীমাহীন দুর্নীতির চিত্র ফুটে উঠেছে। দ্রব্যমূল্য আকাশ ছোঁয়া। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বাজারে আগুন, জনজীবনে নাভিশ্বাস ওঠেছে। সরকার নির্বিকার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বরং প্রশ্রয় দিচ্ছে। বাজার মনিটরিং নাই। গ্রাম-শহরে রেশনিং ব্যবস্থা চালুর গণদাবিও উপেক্ষিত। একদিকে অধিকাংশ সাধারণ মানুষের অভাব দারিদ্র বাড়ছে অন্যদিকে একই সময়ে দেশে ৩ হাজার ৪১২ জন নতুন কোটিপতি বেড়েছে।”
বক্তারা বলেন, আওয়ামী সরকারের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন দুর্নীতি, লুটপাট, দলীয়করণ, মূল্যবৃদ্ধি, শ্রমিক ছাঁটাই, নারী ধর্ষণ অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়েছে। ভোট ডাকাতির মাধ্যমে জবরদখলকারী বর্তমান সরকার দেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। সাংবিধানিক সকল প্রতিষ্ঠান অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। নির্বাচনকে নির্বাসনে পাঠিয়ে কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করে গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছে।গার্মেন্টসসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছে, ডিসেম্বর ২০২০ সালের মধ্যে ১ হাজার কারখানা বন্ধ হবে, দশ লক্ষ শ্রমিক ছাঁটাই হবে। ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে পৃষ্ঠপোষকতা ও মদত দিচ্ছে। সরকারের মদতে ও আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে ধর্মান্ধ মৌলবাদী ফ্যাসিস্ট শক্তির আস্ফালন ও ঔদ্ধত্য সীমা ছাড়িয়েছে। এই শ্বারুদ্ধকর অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য জনগণ পরিবর্তন চায়। সেই পরিবর্তনের লক্ষে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা বৈষম্যহীন সমাজ-রাষ্ট্র সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য নেতৃবৃন্দ দেশের সকল বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, শক্তি, ব্যক্তিকে ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
Leave a Reply