1. support@nongartv.com : Nongartv :
  2. regularmd@gmail.com : Suhag Rana : Suhag Rana
মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৭ অপরাহ্ন

সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক তথা বোমা মানিকের ছত্রছায়ায় আবাসিক হোটেলের আড়ালে মাদকের রমরমা জলসা চালাচ্ছেন সুনামগঞ্জের পৌর মেয়র নাদের বখত ও ছাত্রলীগ নেতা দীপংকর কান্তি দে

মুহাম্মদ রবিউল ইসলাম, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
  • আপডেটের সময় শুক্রবার, ৮ এপ্রিল, ২০২২
???????????????????????

মাদকের আন্ডারওয়ার্ল্ডে তারা ডন হিসেবে পরিচিত। কেউ কেউ বলেন গডফাদার। তাদের হাতেই সুনামগঞ্জ জেলার মাদক সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ। বলছিলাম সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক তথা বোমা মানিকের মদদে মাদক সাম্রাজ্য গড়ে তোলার কারিগর সুনামগঞ্জ পৌরমেয়র নাদের বখতের কথা। আর তাদের মাদক সংশ্লিষ্ট সকল অপকর্মের সম্পাদনকারী হচ্ছেন সুনামগঞ্জ ছাত্রলীগ সভাপতি দীপংকর কান্তি দে।

এক দশক আগেও অত্র এলাকায় মাদকের এমন সর্বগ্রাসী অবস্থা লক্ষ্য করা যায়নি। বিগত উপজেলা নির্বাচনের পরে পাল্টে যায় সুনামগঞ্জ জেলার অধীনে শাল্লা ,সুনামগঞ্জ সদর, জগন্নাথপুর, দোঁযার বাজারসহ সহ আশপাশের মাদকের চিত্রায়ন। আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকে ইয়াবা, গাঁজা, ড্যান্ডি কোকেন, মদ ইত্যাদির ক্রয়-বিক্রয় এবং সেবন। সরেজমিন অনুসন্ধান করে মাদক সংশ্লিষ্টতার ভয়ংকর সব তথ্য উঠে আসে। বিভিন্ন সরকারদলীয় ও বিরোধীদলীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের নাম মানুষের আলোচনায় মুখে মুখে। বিভিন্ন সময় দুই-একজন মাদক কারবারি ধরা পড়লেও আইনের ফাঁক- ফোকর দিয়ে বের হয়ে যান। মূল হোতারা থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে। অতি সম্প্রতি সুনামগঞ্জ সদর থানার আশেপাশে অভিযান পরিচালনা করে ৫১ কেজি গাঁজা এবং মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার’সহ আতিকুর (২৭) এবং জামান (২০) নামে দুইজন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত মাদক ব্যবসায়ীরা অবৈধ মাদক তথা গাঁজা ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। কিন্তু মামলা দায়ের করার পূর্বেই প্রভাব খাটিয়ে থানা থেকে তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে যান পৌরমেয়র নাদের বখত।এই ঘটনার পর আমাদের সন্দেহের তীর তার উপর স্থির হয় এবং আমরা খুঁজতে থাকি মাদকের গডফাদারদের। ৬ সপ্তাহের অধিক সময় অনুসন্ধান করে আমরা অধিকতর নিশ্চিত হয়ে প্রতিবেদন লিখি।

এই প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহ করতে যেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাতবিরাতে ছদ্মবেশে আমি বিভিন্ন মাদকের আড্ডায় ঘুরে বেরিয়েছি। কাদের মাধ্যমে অত্র এলাকায় মাদকের প্রসার ঘটছে তা জানার জন্য আমরা কৌশলে বন্ধুত্ব স্থাপনের মাধ্যমে মাদকসেবীদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখি এবং মাদকসেবী সুমন (২৭) (ছদ্মনাম) সাথে কথা বলি। সে জানায় সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি দীপংকর কান্তি দে’র ঘনিষ্ঠজন রবিনের এর কাছ থেকে মাদক সংগ্রহ করে। সেই সূত্র ধরে রবিনের সাথে যোগাযোগ করলে সে আমাদের সাথে কথা বলতে রাজি হয়নি। আমি পরিচয় গোপন রাখার শর্তে কথা বলতে চাইলে সে জানায়, জেলা ও উপজেলায় আবাসিক হোটেলগুলোতে প্রতিরাতে চলে ইয়াবা, গাঁজা, মদ ,কোকেন ও ড্যান্ডির আসর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় আসর আর যেখান থেকে সব মাদক সাপ্লাই হয় সেটি হলো পৌরমেয়র নাদের বখতের মালিকানাদিন হোটেল রেস্ট ইন।

কিশোররা প্রথমত কৌতূহলবশত মাদক গ্রহণ করে যা পরবর্তীতে নেশায় পরিণত হয়। সাধারণত একটু বিত্তবান পরিবারের সন্তানরা ইয়াবা সেবন করে থাকে, যখন টাকা যোগাড় করতে না পারে তখন টাকা জোগাড়ের জন্য বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে। হোটেলের খাবারের সাপ্লাইকারি সবজি বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি তারা শহর থেকে পরিবহনে করে মাছ-সবজি বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী নিয়ে আসার সময় তাদেরকে বাধ্য করা হয় কিছু অবৈধ মালামাল নিয়ে আসার জন্য। তারা জানান তারা যদি এগুলো নিয়ে না আসে তবে তাদের সাথে ব্যবসা করবে না বলে জানায় হোটেল কতৃপক্ষ। হোটেলের সাথে তাদের ব্যবসার চুক্তি বাতিল করা হবে, তাই তারা বাধ্য হয়েই নিয়ে আসে। ট্রাকচালক হাবিব ও লঞ্চ চালক জাবেদের সাথে কথা বলে জানতে পারি শহর থেকে পণ্য পরিবহন করার সময় প্রভাবশালী কিছু লোক তাদেরকে বাধ্য করায় মাদক পরিবহন করার জন্য। তারা পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত করে বলেন পৌরমেয়র নাদের বখতের ঘনিষ্ঠজনেরা এগুলির ব্যবস্থাপনা করে থাকে। তারা হুমকি দিয়ে বলে যদি এসব না করে তাহলে মিথ্যা মাদকের মামলায় ফাঁসিয়ে দেবে। রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে মাদকের স্পটগুলো জমে উঠে তন্মধ্যে দোয়ার বাজার,শাল্লা , সুনামগঞ্জ সদরের নামকরা হোটেল রেস্ট ইন এবং তার সংলগ্ন পরিত্যক্ত বিল্ডিং, তাহিরপুরের মিয়া টাওয়ার, ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন পুরাতন ক্লিনিক,জগন্নাথপুরের পুরাতন স্কুল বিল্ডিংউল্লেখযোগ্য। তন্মধ্যে সবচেয়ে বড় আসর বসে পৌর মেয়রের মালিকানাধীন হোটেল রেস্ট ইনের বিশেষ কক্ষগুলোতে। এসব এলাকার কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে কথা বলে জানা যায়, ছাত্রলীগের সভাপতি দীপংকর কান্তি দের তত্বাবধানে এসব মাদকের আসরগুলো পরিচালনা করা হয়। বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়সহ স্কুলগামী ছাত্রদের টার্গেট করছে দীপংকর দের সাঙ্গপাঙ্গরা। তারা জানান ছাত্রলীগের এ নেতা দীপংকরের ভয়ে অনেকে কথা বলতে নারাজ। দীপংকরের ঘোর অনুগত ছাত্রলীগের কর্মীদের নেতৃত্বে স্কুল- কলেজগামী কিশোরদেরকে প্ররোচিত করে সর্বনাশা মাদকের দিকে ধাবিত করা হচ্ছে। এছাড়াও গড়ে তোলা হয়েছে ২০-২৫ জন সদস্যের কিশোরগ্যাং। এ নিয়ে অভিভাবক মহল উদ্বিগ্ন।

সমাজের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি অতি মুনাফার লোভে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন। অন্ধকার জগতে অস্ত্রের পরেই লাভজনক ব্যবসা হচ্ছে মাদক। আমরা তদন্তের একপর্যায়ে কথা বলি দোয়ার বাজার ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ জনাব নূর উদ্দিনের সাথে তিনি বলেন, আমরা অনেকদিন যাবত প্রত্যক্ষ করছি মাদকের অবস্থা। তিনি জানান অনেক গণ্যমান ব্যক্তিবর্গ এর সাথে জড়িত। তিনি অভিভাবকগণকে আরো সচেতন হওয়ার। পরামর্শ দেন এবং প্রশাসন আরো তৎপর হওয়া প্রয়োজন। সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করার তাগিদ দেন।

ভৌগোলিকভাবে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের কারণে আমাদের সুনামগঞ্জে নানাভাবে নানাপথে বানের জলের মতো মাদক প্রবেশ করছে। যার সিংহভাগ আবার ছড়িয়ে পড়ছে উপজেলার বিভিন্ন মাদক আস্তানায়। প্রশাসনিক দুর্বলতা, আইনের সঠিক প্রয়োগের অভাব, মাদক কারবারীদের সাথে প্রশাসনের সখ্যতা, স্থানীয় ও জাতীয় জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা কারণে মাদকের ভয়াবহতা আজ কল্পনাতীত। ভৌগলিক অবস্থানের দিক বিবেচনায় তুলনামূলকভাবে নেই অত্র এলাকায় তেমন প্রশাসনিক তদারকি। অত্যন্ত লাভজনক এই ব্যবসাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিশাল একটি চক্র। শক্তিশালী এই চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন। কারণ আমাদের সমাজে সর্বস্তরে দুর্নীতির শাখ-প্রশাখা বিস্তৃত। ফলে যেকোনো অপরাধী বা মাদক কারবারিরা আড়ালে থেকে যায় নিজস্ব কৌশলে। আইন ও প্রশাসন এদের প্রভাবের কাছে নতজানু। পুলিশ বলছে, ‘বিদ্যমান আইনে মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কারণ হাতেনাতে মাদক উদ্ধার ছাড়া আমরা কাউকে গ্রেফতার করতে পারি না’।

কথা বলি মাদক বিরোধী সামাজিক সংগঠন “আশার আলো’ সুনামগঞ্জ সদর শাখার আহ্বায়ক জুবায়ের রহমানের সাথে কথা বলে তার কাছ থেকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাই। তিনি উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তার দিকে ইঙ্গিত করে তারাই মাদকের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। তিনি ২৬ জুন আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস ছাড়াও সচেতনতামূলক নান কর্মসূচি পালনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

এমন এক চলমান সময় আমাদের কাছে খবর আসে, সুনামগঞ্জ সদরের হোটেল রেস্ট ইনে বিভিন্ন প্রকার মাদকের চালান এসে পৌছেছে। সেই সূত্র ধরে অতি গোপনীয়তার সাথে আমরা আমাদের সোর্স আবাসিক হোটেলের ভিতরে পাঠিয়ে স্থিরচিত্র সংগ্রহ করে নিশ্চিত হই এখান থেকে মাদক সরবরাহ করা হচ্ছে।

এখানে উল্লেখ্য যে, এসবের সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক তথা বোমা মানিক, পৌরমেয়র নাদের বখত এবং জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি দীপংকর কান্তি দে।দীর্ঘদিন ধরে তারা এই সিন্ডিকেট চালিয়ে যাচ্ছেন। যেসকল হোটেল কক্ষগুলোতে এসব মাদক লুকিয়ে রাখা হয় সেগুলোতে রয়েছে নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী এবং সিসিটিভি ক্যামেরা। মাদক ডুকা এবং বের হওয়ার সময় ক্যামেরাগুলো বন্ধ রাখা হয়। উপজেলার প্রতিটি মানুষের কাছে এই আবাসিক হোটেলের বিষয়ে অজানা নয় কিন্তু যেহেতু মালিকপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় এ বিষয়ে কেউ কথা বলতে নারাজ।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© 2020 Nongartv.com . Design & Development by PAPRHI
Theme Customization By Freelancer Zone