তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা বা সমঝোতায় যেতে চায় না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে অনড় অবস্থানেই থাকবে দলটি।
সংবিধান অনুযায়ী চলমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেক্ষেত্রে চলতি বছর ডিসেম্বরের শেষের দিকে কিংবা আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম দিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এই নির্বাচনের সময় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারই দায়িত্বে থাকবে। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা জানিয়ে আসছে বিএনপি। আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
বিএনপি আন্দোলন করলেও উচ্চ আদালতের রায়ে বাতিল হয়ে যাওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি ফিরিয়ে আনতে চায় না আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা বা বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে কোনো ধরনের সমঝোতার কথা চিন্তা করছে না আওয়ামী লীগ।
সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, আদালতের রায়ে অনেক আগেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হয়ে গেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হওয়ার পর সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত সরকার দায়িত্বে থাকা অবস্থায় গত দুইটি নির্বাচন হয়েছে। আগামী নির্বাচনও বর্তমান নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন।
তাদের দাবি, সংবিধান মেনেই ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়। এর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি আসেনি বলে নির্বাচন থেমে থাকেনি। ওই নির্বাচনকে ব্যাহত করতে বিএনপি-জামায়াত লাগাতার আন্দোলন এবং দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে। তারপরও ওই নির্বাচন সংবিধান নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠিত হয়। আগামী নির্বাচনও নির্ধারিত সময়েই হবে।
আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকরা জানান, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত সরকার থাকা অবস্থাতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং বিএনপির দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এটি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অবস্থান। আর ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিএনপি আন্দোলন শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার কোনো সুযোগ বা প্রয়োজনও নেই বলে জানান আওয়ামী লীগ নেতারা।
তবে বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে এসে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন মেনে নিলে তখন প্রয়োজন হলে আলোচনার কথা চিন্তাভাবনা করবে আওয়ামী লীগ। কিন্তু বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবির কাছে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলেও জানান তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, যেহেতু তারা এই সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে, তাদের সঙ্গে তো আলোচনার আর সুযোগ নেই। আলোচনার বিষয় তখনই আসতে পারে, যখন তারা এই দাবি থেকে সরে আসবে। এসব দাবি থেকে সরে আসলে তখন দেখা যেতে পারে। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে না এলে গণতন্ত্রের কোনো ক্ষতি হবে না। নির্বাচন বসে থাকবে না, যথাসময়েই হবে। বিএনপি ছাড়া আরও দল আছে নির্বাচন করার। বিএনপিকে নির্বাচনে অপরিহার্য করে তোলার চেষ্টাও ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করি।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি ভোট করার জন্য অনির্বাচিত সরকার আনতে চায়, বিষয়টি এমন নয়। ভোটে তাদের নিশ্চিত ভরাডুবি হবে, এটি তারা ভালো করেই উপলব্ধি করে। তাদের আন্দোলনের লক্ষ্য অরাজকতা তৈরি করা। বিএনপি নির্বাচনে এলো কি না, সেটা বড় কথা নয়, দেখতে হবে জনগণ এলো কি না। নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণই বড় কথা, জনগণের ভোট দেওয়াই বড় কথা। ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে আসেনি, কিন্তু জনগণ ঠিকই ভোট দিয়েছে। যাদের লক্ষ্য অরাজকতা তৈরি করা, তাদের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে না।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, জনগণের ম্যান্ডেট নিতে হলে নির্বাচনে আসতে হবে। আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিএনপিও নির্বাচনে আসবে। এই আমাদের প্রত্যাশা। এটা কাউকে সেধে এনে ভাত খাওয়ানোর বিষয় না। এমনটি শিশুদের ক্ষেত্রে হয়। কিন্তু, রাজনৈতিক দল, রাজনীতির ক্ষেত্রে তো এমনটি হয় না। এখানে ডেকে আনার কোনো বিষয় নেই।
সূত্র:-বাংলানিউজ
Leave a Reply