মো. সাহেদ, ক’দিন আগেও যিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন, সময়ের ব্যবধানে এখন সেই সাহেদ যেন সবার কাছেই অচেনা! শুধুই যে সাহেদ অচেনা তাই নয়, মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে করোনা রোগের চিকিৎসার জন্য চুক্তিবদ্ধ তার প্রতিষ্ঠান রিজেন্ট হাসপাতালের বিষয়েও দায় নিতে রাজি নন কেউ।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সাহেদ কাণ্ডে তাদের কোন দায় নেই। রিজেন্টের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের চুক্তির পরেও কেন দায় নেই সে বিষয়ে কথা বলতে রাজি নন কেউ। বিশ্লেষকরা বলছেন, কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের এমন কাণ্ডে সরাসরি সংশ্লিষ্টতা সত্ত্বেও দায় না নেয়া দুর্নীতি ও অনিয়মকে আরো বেশি উৎসাহিত করে।
করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া সনদ দেয়াসহ বিভিন্ন প্রতারণার অভিযোগে ৬ জুলাই অভিযান চালিয়ে রিজেন্ট গ্রুপের প্রধান কার্যালয় এবং রাজধানীর উত্তরা ও মিরপুরের রিজেন্ট হাসপাতালের শাখা দুটি সিলগালা করা হয়। পরে সেদিন রাতে সাহেদসহ রিজেন্ট হাসপাতাল ও রিজেন্ট গ্রুপের ১৭ জনের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করেছে র্যাব। এ নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর মূলহোতা সাহেদকে খুঁজছে আইনশৃংখলা বাহিনী। তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৪ সালে রিজেন্ট হাসপাতালের অনুমোদনের মেয়াদ শেষ হয়েছিল। কিন্তু নবায়ন না করেই চিকিৎসা দিচ্ছিল হাসপাতালটি। এমনকি অনুমোদনহীন রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গেই গত ২১ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদফতর চুক্তি হয়। যেখানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের তৎকালীন সচিব আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এমন অনুমোদনহীন হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তির দায় কি মন্ত্রণালয় এড়াতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল মান্নান বার্তা২৪.কমকে বলেন, “সাহেদ ইস্যুটি তো আপনারা দেখছেনই কি ঘটেছিল, ছবিতেই দেখেছেন। কিন্তু এর দায় নেয়া বা অনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়ার তো কিছু নেই।”
এ বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ ও মেসেজের উত্তর করেননি।
এদিকে লাইসেন্স (সনদ) নবায়ন না করার পরও রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তি করার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ প্রসঙ্গে অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আয়েশা আক্তার বার্তা২৪.কমকে বলেন, এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছ। কমিটি তদন্ত করেই রিপোর্ট তৈরি করবে। এরপরই আমরা সেটি মন্ত্রণালয়ে পাঠাব।
সাহেদ ইস্যুতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের দায় এড়ানোর বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে বলেন, সাহেদ ইস্যুতে মন্ত্রণালয় বা অধিদফতর কেউই দায় এড়াতে পারে না। কোন খোঁজ খবর না নিয়েই একটি হাসপাতালকে করোনার চিকিৎসা দিতে কার্যাদেশ দেয়ার কোন কারণ নেই। সাহেদ একা কিছু করেননি। সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরাও এর সঙ্গে যুক্ত ছিল। অবশ্যই এ প্রক্রিয়ায় তাদের যোগসাজশ ছিল। ২০১৪ সালে লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কিভাবে তাদের সঙ্গে চুক্তি হয়? এখন সে বিষয়ে দায় স্বীকার না করাও দুর্নীতি ও অনিয়মের জন্য সহায়ক।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বার্তা২৪.কমকে বলেন, রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তি করার পরও সাহেদ ইস্যুতে দায় না নেয়া গ্রহণযোগ্য নয়। এটা কি মামা বাড়ির আবদার। যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত রয়েছেন তাদেরই তো দায় নিতে হবে। কারণ অবশ্যই তাদের দায় আছে।
Leave a Reply