সেলিম আউয়াল : দু’হাজার বছর আগে রোমানরা হাতে লেখে সংবাদপত্র প্রকাশ করলেও বাংলা সংবাদপত্র বের হবার দুশো বছর পুরো হয়েছে বিগত ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে। তবে ২৩৮ বছর আগে জাহাজ ব্যবসায়ী জেমস অগাস্টাস হিকির হাত ধরে উপমহাদেশে সংবাদপত্রের সূচনা। ১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ জানুয়ারি হিকি ইংরেজি সাপ্তাহিক সংবাদপত্র বেঙ্গল গেজেট বা ‘ক্যালকাটা জেনারেল অ্যাডভার্টাইজার’ বের করেন। এটাকে অনেকে ‘হিকির গেজেট’ বলতো। এজন্যে এটি ‘হিকির গেজেট’ নামেই পরিচিত হয়। এই পত্রিকাই ভারতের ছাপা হওয়া প্রথম পত্রিকা। সেই সময়ের গভর্ণর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের স্ত্রী ও কয়েকজন পদস্থ লোকের বিরুদ্ধে মানহানিকর প্রবন্ধ প্রকাশ করার ‘অপরাধে’ হিকির জেল ও জরিমানা হয়। সরকার পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়।
১৭৮০ থেকে ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত নয়টি ইংরেজি সংবাদপত্র ও দুটো ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়। এগুলো হচ্ছে ইন্ডিয়া গেজেট (১৭৮০), ক্যালকাটা গেজেট, বেঙ্গল গেজেট (১৭৮০), মাদ্রাজ কুরিয়ার (১৭৮৫), ওরিয়েন্টাল, ম্যাগাজিন ক্যালকাটা ক্রনিকল, বোম্বে হেরাল্ড, বোম্বে কুরিয়ার, মাদ্রাজ গেজেট, ইন্ডিয়া হেরাল্ড, বেঙ্গল হরকরা ইত্যাদি ইংরেজি কাগজের প্রায় চার দশকের এক গৌরবময় অধ্যায়। এরই ধারাবাহিকতায় এইসব কাজকামের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে বের হয় প্রথম বাংলা সংবাদপত্র। শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশনের পাদ্রিদের পক্ষ থেকে জন ক্লার্ক মার্শম্যানের সম্পাদনায় বের হয় প্রথম বাংলা সাময়িকপত্র ‘দিºর্শণ’। তিনি ছিলেন মিশনের পাদ্রি জে.সি. মার্শম্যানের ছেলে। এর ২৬টি সংখ্যা বের হয়েছিলো। সাময়িকীটিতে শুধু বাংলায় নয় ইংরেজিতেও প্রবন্ধ বের হতো। ‘দিºর্শণ’ বের হবার এক মাস পর, ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ মে মার্শম্যান বের করেন ‘সমাচার দর্পণ’ নামে একটি সাপ্তাহিক কাগজ। এটিই প্রথম বাংলা সংবাদপত্র। এই পত্রিকার সম্পাদনার কাজে মার্শম্যানকে সহায়তা করেন জয়গোপাল তর্কালঙ্কার, তারিণীচরণ শিরোমণি প্রমুখ। একই সময়ে আরেকটি বাংলা সাপ্তাহিক বাঙালিদের সম্পাদনায় বের হয়েছিলো, এর নাম বাঙ্গাল গেজেট। এর সম্পাদক ও মালিক ছিলেন হরচন্দ্র রায়। এসব পত্রিকায় প্রধানত সংবাদ পরিবেশন ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোচনা প্রাধান্য বিস্তার করে।
বাংলা ভাষায় সংবাদপত্র প্রকাশের বারো বছর পর ‘সমাচার সভারাজেন্দ্র’ নামে একটি বাংলা সাপ্তাহিক প্রকাশিত হয়। এটিই ছিলো মুসলমান সম্পাদিত প্রথম বাংলা সংবাদপত্র। কলিঙ্গার শেখ আলীমুল্লা বাংলা ও ফারসি ভাষায় একটি সাপ্তাহিক বের করার জন্যে অনুমতি পাবার ছ’মাস পর ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দের ৭মার্চ (২৫ ফাল্গুন ১২৩৭) ‘সমাচার সভা রাজেন্দ্র’ বের করেন। আজকের বাংলাদেশে ছাপাখানার প্রথম প্রচলন হয় রংপুরে। ১৮৭৪ সালের আগস্টে (বাংলা ভাদ্র, ১২৫৪ সাল) ‘রঙ্গপুর বার্তাবহ’ পত্রিকাটি এ ছাপাখানা থেকে বের হয়। এটি পূর্ববঙ্গ বা বাংলাদেশ থেকে বের হওয়া প্রথম সাপ্তাহিক পত্রিকা। রংপুরের কুনডি পরগণার জমিদার কালীচন্দ্র রায়ের আর্থিক আনুকূল্যে পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তেমন কোন বড়ো ধরনের বিরতি ছাড়াই এর প্রকাশনা অব্যাহত থাকে। পত্রিকাটির প্রথম সম্পাদক ছিলেন গুরুচরণ শর্মা রায়। তার মৃত্যুর পর নীলাম্বর মুখোপাধ্যায় পত্রিকাটির স্বত্ব কিনে নেন। প্রতি মঙ্গলবার এটি প্রকাশিত হতো। এর প্রচার সংখ্যা ছিলো ১০০। শুরুর দিকে ‘রঙ্গপুর বার্তাবহ’ কলকাতার সংবাদ প্রচার করলেও পরের দিকে স্থানীয় সংবাদ প্রকাশ করত।
মূলত এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থা এবং শিক্ষার ওপর রঙ্গপুর বার্তাবহ আলোকপাত করত। রংপুরের পরে ১৮৪৮ সালে ঢাকার বাবুবাজারে একটি মুদ্রণযন্ত্র স্থাপিত হয়। ১৮৫৬ সালে ঢাকা নিউজ প্রেস স্থাপিত হয় এবং এখান থেকেই ‘ঢাকা নিউজ’ প্রকাশিত হয়। ফলে সংবাদপত্র প্রকাশে পূর্ববাংলায় ঢাকার চেয়ে মফস্বল এগিয়ে ছিল। পরের বছর সিপাহী বিদ্রোহের বছর। বিদ্রোহের খবর পরিবেশন বন্ধ করানোর জন্য ইংরেজ সরকার নানা ছোটখাটো আইন করেছিল।
১৮৫৭ সালের আগে প্রকাশিত দুটি সংবাদপত্র ছাড়া ১৮৫৭ থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বা তৎকালীন পূর্ববঙ্গ থেকে ৭৬টি সংবাদপত্র ও ১৬২টি সাময়িকপত্র প্রকাশিত হয়েছিল। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ কেবল আমাদের রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নয়, সংবাদপত্রের ইতিহাসেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ সময় কলকাতা থেকে ‘সোমপ্রকাশ’ (১৫ নভেম্বর, ১৮৫৮) প্রকাশিত হয়। সোমপ্রকাশই প্রথম খোলামেলাভাবে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করত, যার প্রভাব অন্য সব সংবাদপত্রেও পড়তে থাকে। এর মাধ্যমে বাঙালি মধ্যবিত্তের রাজনৈতিক চেতনার সম্প্রসারণ হতে থাকে। ১৮৬৫ সালে ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি বাংলা সংবাদপত্রে ‘অন্তর্জলিযাত্রা’ সম্পর্কে খবর ছাপা হয়। খবরটি ব্রিটিশ সরকারের ওপর মহলেও খুব আলোচিত হয়। কারণ ততদিনে সতীদাহ প্রথা আইন, বিধবা বিবাহ আইন পাস হয়ে গিয়েছে। বাংলার লাট সাহেব হিন্দুসমাজের ওই কুপ্রথার বিরুদ্ধে ভারত সচিবের কাছে নোট পাঠিয়েছিলেন। এতে প্রমাণ হয়, একটি ছোট আঞ্চলিক পর্যায়ের খবরে তারা কতখানি বিচলিত হন। ভারতে সা¤্রাজ্য রক্ষার তাগিদে ব্রিটিশ সরকার ১৮৭৮ সালে ‘ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট’ প্রণয়ন করেছিলেন। সংবাদপত্রের দৌরাত্ম্য থামাতে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টও তৈরি করা হয়েছিল সে সময়।
বাংলা সংবাদপত্রের দৃষ্টিভঙ্গি বদলের পেছনে কাঙ্গাল হরিনাথের (হরিনাথ মজুমদার) ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ১৮৬৩ সালের এপ্রিল থেকে এটি প্রকাশিত হতে থাকে। গ্রামবার্তা প্রকাশিকায় সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞানবিষয়ক প্রবন্ধ ছাড়াও সমসাময়িক সামাজিক ও রাজনৈতিক অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ ও নিবন্ধ প্রকাশ করে হরিনাথ বিপুল খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনি নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের কাহিনীও নির্বিবাদে প্রচার করতেন। সে সময়ের খ্যাতনামা পন্ডিত, সাহিত্যিকরা গ্রামবার্তা প্রকাশিকায় লিখে নিজেদের গৌরবান্বিত মনে করতেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মীর মশাররফ হোসেন, হিমালয় ভ্রমণ কাহিনীর লেখক জলধর সেন এখানে লিখতেন। পরবর্তীতে ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকার বিখ্যাত সম্পাদক জলধর সেন তার জীবনের কেন্দ্রবিন্দুতে শ্রদ্ধার শ্রেষ্ঠ আসনে বসিয়েছিলেন কাঙ্গাল হরিনাথকে।
বাংলা সংবাদপত্রটি প্রকাশের মাত্র তের বছরের মাথায় সিলেটের এক কৃতীসন্তান যিনি কলকাতায় নিজেকে একজন সম্পাদক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন, তিনি হচ্ছেন মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার ইটা পাঁচগাঁওয়ের গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্য (১৭৯৯-১৮৫৯)। তিনি পন্ডিত গুড়গুড়ি ভট্টাচার্য নামেও খুব পরিচিত ছিলেন। গৌরীশঙ্কর শুধু সিলেটের প্রথম সাংবাদিকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন উনিশ শতকের একজন অসাধারণ প্রতিভাবান সাংবাদিক।
গৌরীশঙ্করের কর্মক্ষেত্র ছিলো কলকাতা। প্রথমে তিনি কলকাতায় ‘জ্ঞানান্বেষণ’ নামের পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। জ্ঞানান্বেষণ পত্রিকাটি ছিলো কলকাতার ইংরেজি জানা শিক্ষিত উদারপন্থীদের মুখপত্র। বাংলা সংবাদপত্র প্রকাশের প্রায় ৫৮ বছর পর সিলেট থেকে প্রকাশিত হয় প্রথম সংবাদপত্র প্যারী চরণ দাশ সম্পাদিত শ্রীহট্ট প্রকাশ। সিলেট বলতে আমরা বোঝবো বর্তমান সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভিবাজার, সুনামগঞ্জ এবং আসামের শিলচর তথা কাছাড়, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি। কারণ ১৮৭৪ সালে সিলেট আসামের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ১৯৪৭ পর্যন্ত সিলেট আসামের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অন্যান্য জেলার মতো সিলেটকেও দখলে আনে ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে। এই আমলের শুরু থেকে ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সিলেট ছিলো ঢাকা বিভাগের একটি জেলা। ইংরেজ সরকার পুরনো কামরূপ রাজ্যের পাঁচটি জেলাÑকামরূপ, দড়ং, নওগাঁ, শিবসাগর ও লক্ষ্মীমপুর এবং খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় নিয়ে ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ৬ ফেব্রুয়ারি চিফ কমিশনার শাসিত আসাম প্রদেশ গঠন করার সাত মাস পর মূলত আর্থিক ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে সিলেট, কাছাড় ও গোয়ালপাড়া জেলাকে অনগ্রসর এই নতুন প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত করে। তখন আসামের লোকসংখ্যা ছিলো কম এবং ব্যয়ের তুলনায় আয় ছিলো নগন্য। আবার স্থানীয় প্রশাসন পরিচালনার মতো শিক্ষিত লোকেরও অভাব ছিলো। অপর দিকে আসাম সংলগ্ন বাংলা ভাষাভাষী সিলেট ও কাছাড় জেলায় লোক বসতি ছিলো অপেক্ষাকৃত ঘন। এই দুই জেলার লোকজন ছিলো শিক্ষা দীক্ষায় বেশ অগ্রসর এবং আয় রোজগারও ছিলো যথেষ্ট। সেই ১৮৪৭ থেকে ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এক নাগাড়ে ৩১ বছর পর্যন্ত সিলেট বাংলা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে। বঙ্গভঙ্গের ফলে আবার সিলেট ৬ বছরের জন্যে পূর্ববঙ্গের সাথে যুক্ত হলেও বঙ্গভঙ্গ রদ হবার পরপরই আবার আসামের সাথে যুক্ত হয়। ব্রিটিশের শাসন এ দেশ থেকে অবসান হওয়া পর্যন্ত সিলেট আসামেই থেকে যায়। তবে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে দেশ ভাগের সময় গণভোটের মাধ্যমে দ্বিখন্ডিত সিলেট পাকিস্তানে যোগ দেয়। করিমগঞ্জ মহকুমার সাড়ে তিনটে থানাÑপাথারকান্দি, রাতাবাড়ি, বদরপুর ও করিমগঞ্জের অর্ধেক ভারতে থেকে যায়। দীর্ঘদিন আসামের অংশ হওয়া সত্ত্বেও সিলেটের মানুষ নিজেদের স্বকীয় বৈশিষ্ট টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে খুব সিরিয়াস ছিলেন। সেইভাবে ভারতের করিমগঞ্জ, শিলচর, হাইলাকান্দি ও শিলঙের বাংলাভাষী মানুষ তাদের শেকড়ের টান ভুলতে পারেননি। সিলেটের সংস্কৃতি, ইতিহাস, কৃষ্টি ও সভ্যতাকে সম্বল করে বেঁেচ থাকার সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছেন।
সিলেটে সংবাদপত্র প্রকাশের ১০৮ বছর পর ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে বের হয় দৈনিক সিলেটের ডাক। সিলেটের সংবাদপত্রের ইতিহাসে তিনটি দীর্ঘজীবী সংবাদপত্রের মধ্যে একটি হচ্ছে দৈনিক সিলেটের ডাক। অপর দুটো হচ্ছে যুগভেরী ও জনশক্তি। ১৯৭৫-এর পর থেকে জনশক্তির প্রকাশনা বন্ধ রয়েছে। সিলেটের আরেকটি দীর্ঘজীবী সাময়িকপত্র হচ্ছে আল ইসলাহ। সিলেটের ডাক প্রকাশনার সূচনালগ্ন থেকেই সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার পরিচয় বহন করছে। সবচেয়ে বড়ো বিষয় হচ্ছে পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে। শুধুমাত্র সাম্প্রতিক করোনা দুর্যোগকালে সারা দেশের মতো সিলেটের ডাক-এর প্রকাশনাও কিছুদিন বন্ধ ছিলো। তবে আবার নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। সিলেটের ডাক একসময় সিসার অক্ষর বসিয়ে হ্যান্ড কম্পোজে বের হতো, তখন পৃষ্ঠা ছিলো চার। আর এখন অফসেটে ছাপা হয়ে বের হচ্ছে আট পৃষ্ঠায় (করোনা পরিস্থিতির কারণে সম্প্রতি চার পৃষ্ঠায় বের হচ্ছে)। পত্রিকা মুদ্রণে ব্যবহার করা হচ্ছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। সিলেটের ডাক ছাপা থেকে শুরু করে ভাজ হওয়া পর্যন্ত সবকিছুই মেশিনের মাধ্যমে সম্পাদিত হচ্ছে। মুদ্রণ সৌকর্যের সাথে সাথে সিলেটের ডাক-এর গুণগত মানের বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে।
মান রক্ষায় বলা যায় সিলেটের ডাক আপসহীন। প্রথমত যেটা লক্ষ্যণীয় বিভিন্ন পত্রিকা আছে হাতে নিলে অনুভব করা যায় পত্রিকাটি কোন দলের অথবা কোন মতাদর্শের বাহক। আর এখানেই সিলেটের ডাক ব্যতিক্রম। পত্রিকাটিতে কোন দলের বাণীবাহক হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না। দেখা যাবে ছোট্ট একটি দল যদি কোর্ট পয়েন্টে একটি বড়ো সমাবেশ করে, তার সংবাদ যেমন ডাক গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করে, একইভাবে বড়ো দলের একটি সমাবেশ কোর্ট পয়েন্টে হলে তাও সিলেটের ডাকে গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হয়। সৌভাগ্যবশত দীর্ঘদিন সিলেটের ডাকে আমার কাজ করার সুযোগ হয়েছে। বেশ কিছুদিন বার্তা সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু একটি বিষয় স্বীকার করতে হবে পত্রিকার সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি দানবীর রাগীব আালী, পত্রিকার সাবেক সম্পাদক রাবেয়া খাতুন চৌধুরী, বর্তমান সম্পাদক আবদুল হাই কখনো কোন দলের পক্ষে বা কোন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অহেতুক অপপ্রচারের জন্য কোন ধরনের নির্দেশনা দেননি। একইভাবে একটি বিষয় স্বীকার করতে হবে মেঘবৃষ্টি ঝড় হোক, আর হরতাল-বন্ধের বিষয় হোক সিলেটের ডাক-এর সকল স্তরের কর্মীরা মাসের প্রথম দিন তাদের বেতন পেয়েছেন। সাহিত্য, শিশুদের পাতা, চিকিৎসা, ধর্ম, ইতিহাস-ঐতিহ্য, বিনোদন বিষয়ে প্রতি সপ্তাহে সিলেটের ডাক-এ নিয়মিত পাতা রয়েছে। এইসব পাতা পাঠককে যেমন ইতিহাস-ঐতিহ্য বিষয়ে সচেতন করে তুলছে, তেমনি পাঠকের মনন গঠনে সহায়তা করছে।
পত্রিকার প্রাণভোমরা সাংবাদিকদের কথা বলতে হয়। সত্যি সত্যি বাছাই করা কিছু মানুষের হাত দিয়ে পত্রিকাটি বের হচ্ছে। এরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা-মননে অত্যন্ত অগ্রসর মানুষ। সিলেটের ডাক-এর সাংবাদিকরা আজ দেশেবিদেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছেন। বিশেষ করে যারা এখনো মিডিয়ার সাথে সম্পৃক্ত তারা আজ বিভিন্ন মিডিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। সিলেট থেকে বিভিন্ন সময় ত্রৈমাসিক, মাসিক, পাক্ষিক, সাপ্তাহিক, দৈনিক পত্রিকা বের হতে থাকে। পায়ে ঠেলা ছাপাখানা থেকে আজ সুইচ টেপা অফসেট প্রেস। পত্রিকা বের হচ্ছে, বন্ধ হচ্ছে, আবার বের হচ্ছে। কোনো কোনোটি আর আলো মুখ দেখেনি। অনেক পত্রিকা আজ বিস্মৃত। অনেক সাংবাদিক হারিয়ে গেছেন বিস্মৃতির অতলে। কিন্তু সেই সব সাংবাদিকদের শ্রম আর মেধার মাধ্যমে আমাদের সংবাদপত্র জগৎ আজকের অবস্থায় এসে পৌঁছেছে।
দেখতে দেখতে ছত্রিশটি বছর পেরিয়ে সিলেটের ডাক আজ সাঁইত্রিশ বর্ষে পা রাখছে। এটা সিলেটের ডাক-এর সাথে সংশ্লিষ্টদের জন্যে যেমন আনন্দদায়ক, তেমনি সিলেটবাসীর জন্যও আনন্দদায়ক। কারণ ভালো পত্রিকার বেঁচে থাকার অর্থ হচ্ছেÑউন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকা, সম্প্রীতির ধারা অব্যাহত থাকা, মানবতার বিজয় পতাকা পত্ পত্ করে উড়া। এইসব বিষয় সামনে রেখে সিলেটের ডাক এগিয়ে যাক, দীর্ঘজীবী হোকÑ সিলেটের একজন মানুষ হিসেবে, সচেতন একজন মানুষ হিসেবে, সিলেটের ডাক-এর একজন গর্বিত সাবেক কর্মী হিসেবে এটাই আমাদের কামনা।
লেখক : সাংবাদিক, গল্পকার
Leave a Reply