রাত থেকে মনটা খারাপ। কৈশোর-যৌবনের হাজারো স্মৃতি বিজড়িত প্রিয় বিদ্যাপীঠ এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের ন্যাক্কারজনক ঘটনার কথা শুনে। হৃদয়টা ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানের সাবেক একজন শিক্ষার্থী হিসেবে নিজেকে খুব লজ্জিতবোধ করছি। কতিপয় কুলাঙ্গারের কারণে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ^ মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হচ্ছে প্রিয় বিদ্যাপীঠের নাম। স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রী কে জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে স্বামীকে বন্দী রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ। তাও আবার পূণ্যভুমি সিলেটের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের ছাত্রাবাসে। এই ত কয় বছর হলো। এই ছাত্রাবাসটিকে পুড়িয়ে দিয়েছিল ছাত্রলীগ নামের কতিপয় হিংস্র জানোয়ারের দল। সেই ক্ষত এখনো শুকায় নি। আবারো ছাত্রলীগের কতিপয় লম্পটদের নগ্ন থাবায় বিধ্বস্ত হলো শতবর্ষের ঐতিহ্যের স্মারক এমসি ছাত্রাবাসের দীর্ঘদিনের লালিত গৌরব। নিন্দা জানানোরও ত একটা ভাষা থাকে। কিন্তু এমন কর্মকান্ডের নিন্দা জানানোর ভাষা যেন আজ ভুলেই গেছি। একজন সচেতন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো ত একটা নিয়ম মাফিক কাজ। কিন্তু এমন বর্বরতার কি নিন্দা হয়! নাকি প্রতিবাদ করা যায়?
আমি রাজনীতি পাগল মানুষ। রাজনীতির কারণে পরিবারকে সময় দিতে পারিনা। তাই করোনাকালের এক ফাকে পরিবারের সদস্যদের সাথে সময় কাটাতে বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছি। সুদুর প্রবাসে থাকলেও মনটা সারাক্ষণ দেশ মা ও মাটিকে নিয়েই পড়ে থাকে। একটা সময় সকালে পত্রিকার পাতা খুললে দেশ ও বিশে^র খবর জানা যেত। আর আর এখন ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইন নিউজের মাধ্যমে মুহুর্তের খবর চোখের সামনে ভেসে উঠেছে। এমসি ছাত্রাবাসের ঘটনার খবর দেখে সারা রাত একবারের জন্য চোখের পাতায় ঘুম আনতে পারিনি। আমরাও ত ছাত্ররাজনীতি করে এসেছি। এমসি কলেজের প্রতিটা পরতে পরতে আমাদের স্লোগান ছড়িয়ে দিয়েছিলাম। যার কারণে এমসি কলেজের শিক্ষার্থীরা শুধু দেশ নয় বিদেশেও নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সেই এমসি কলেজে আজ ছাত্ররাজনীতির নাম স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীকে কেড়ে নিয়ে পালাক্রমে গণধর্ষণ। এ তো আইয়্যামে জাহেলিয়াতকেও হার মানিয়েছে।
আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আছে টানা ১২ বছর ধরে। এই ১২ বছরে শুধু এমসি কলেজ ও টিলাগড় পয়েন্ট কেন্দ্রীক তাদের আভ্যন্তরীণ কোন্দলে মারা গেছে তাদের দলের এক ডজন নেতাকর্মী। একটিরও বিচার হয়নি। টিলাগড়কে সিলেটের ডেঞ্জার জোনে পরিনত করা হয়েছে। যে টিলাগড়ে ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ ও সিলেট সরকারী কলেজ অবস্থিত। যে পয়েন্টটি প্রতিদিন হাজার হাজার শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখরিত হয়। ক্ষমতাসীন দলের দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতির কারণে সেই টিলাগড় পয়েন্ট এখন আতংকের জনপদ। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সারাদেশের ন্যায় সিলেটের সবকটি প্রতিষ্ঠানে অন্যান্য ছাত্রসংগঠনকে বের করে দেয়া হয়েছে। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে চাইলে তার উপর নির্যাতনের স্টীম রোলার চালানো হয়। পুলিশী দিয়ে গ্রেফতার হয়রানী তো আছেই। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগ যেন বাধাহীন রামরাজত্বে পরিনত হয়েছে। যার বহিঃপ্রকাশ এমসি ছাত্রাবাসে স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীকে কেড়ে নিয়ে গণধর্ষণ। এমন কাজের ধিক্কার জানানোর ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। আর বিচার। এ তো আরো দুরাশার নাম। এই সরকারের কাছে বিচার চেয়ে কি লাভ আছে। বিচার ত শুধু বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের জন্য। নিজ দলের কয়জন অপরাধী সাজা পেয়েছে এই সরকারের আমলে। কয়েকটা পাপিয়া, সাবরিনা, সাহেদকে গ্রেফতার করে বিচারের নামে নাটক সাজিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
এমন ঘটনা যে শুধু সিলেটে ঘটছে তা নয়। সারাদেশেই তা ঘটছে। এই মাত্র কদিন হলো- রাজধানীতে নীলা নামের একটি মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। পার্বত্য এলাকায় একটা মেয়েকে ধর্ষণ করে ফেলে দেয়া হয়েছে। ধর্ষিতা মেয়েকে তারই বাবা-মা রক্তাক্ত অবস্থায় ধরাধরি করে নিয়ে আসছে। এ কেমন বাংলাদেশ? এমন দেশের জন্য কি আমাদের দামাল ছেলেরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল। ক্ষমতার অহংকারে যারা আজ এমন ঘৃণ্য তৎপরতায় মেতে উঠেছে তারা কি একবারও ভাবেনা ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। যারা সন্ত্রাসী লম্পটদের মদদ দিচ্ছেন। তারাও কি ভাবেন না যে ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। অনেক হয়েছে এবার ক্ষান্ত দিন। মনে রাখবেন আপনাদের ঘরেও মা-বোন মেয়েরা রয়েছে। অন্ততপক্ষে সেই মা-বোন ও মেয়েদের দিকে তাকিয়ে গণধর্ষণের মতো ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর হাতে তুলে দিন। আর যদি এসব ধর্ষকদের বাচানোর চেষ্টা করেন। তাহলে এই লম্পটগুলা আপনার পরিবারের মেয়েদের দিকেও হাত বাড়াবে।
সচেতন সিলেটবাসীর প্রতি আহ্বান শুধু বিচার বিচার চাই বলে চিৎকার করে দেয়াল ফাটিয়ে লাভ নেই। আমাদের জাগতে হবে। এক হতে হবে। দুর্বৃত্তদের কবল থেকে পূণ্যভুমি সিলেটকে রক্ষা করতে হবে। সিলেটের ইতিহাস ঐতিহ্য বিনষ্টকারীদের রুখে দিতে হবে। আমরা বীরের জাতি। আমরা বহু দুর্যোগ, বহু ক্রান্তিকাল পাড়ি দিয়ে এই অবস্থায় এসে দাঁিড়য়েছি। এবারও আমরা বিজয়ী হবো ইনশাআল্লাহ। এজন্য চাই একটি উদ্যোগ ও একটু প্রচেষ্ঠা।
(লেখকের ফেইসবুক থেকে নেয়া)
লেখক: আলী আহমদ
সাবেক সাধারণ সম্পাদক
সিলেট জেলা বিএনপি।
সাবেক ছাত্র এমসি কলেজ ,সিলেট।
Leave a Reply