1. sylpe2019@gmail.com : Nongartv :
  2. regularmd@gmail.com : Suhag Rana : Suhag Rana
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:০৫ অপরাহ্ন

ইতিহাস বিবর্তনের ঝাপসা আলোয় বঙ্গবীর ওসমানী- সাজন আহমদ সাজু

সাজন আহমদ সাজু
  • আপডেটের সময় মঙ্গলবার, ৩১ আগস্ট, ২০২১

১৯৭১ সালের মুক্তি সংগ্রামে বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ছিলো আমাদের হাজার বছরের লালিত স্বপ্ন। পরাজয়ের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে জাতির সূর্য সন্তানরাও সেদিন জেগে উঠেছিলেন রুদ্রমূর্তি নিয়ে। পাকিস্তানি হায়েনার শোষণ বঞ্চনা, নিপীড়ন-নির্যাতন পাশবিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের বারুদ জ্বলে উঠেছিলো। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের নদী বেয়ে এসেছিলো আমাদের কাঙ্খিত স্বাধীনতা। পূব আকাশে উদিত হয়েছিলো বিজয়ের রক্তিম লাল সূর্য।

পরাধীনতার অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়েছিলো ৫৬ হাজার বর্গ মাইলের বাংলাদেশ।
মাত্র নয় মাসের সংগ্রামে একটি জাতির বিজয় সহসাই আসেনি, এর জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে জাতিকে। আর এই বিজয়ের পথকে তরান্বিত করতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কিছু ক্ষণজন্মা সাহসী বীর। যাদের দেশপ্রেম-সততা-নিষ্টা-অদম্য সাহস আর রণকৌশল কোণঠাসা করে পাকিস্তানি বাহিনীকে, পরাজয়ের পথধরিয়ে বিতারিত করে বাংলাদেশের মাটি থেকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধের এমনই এক অদম্য সমর সৈনিক বঙ্গবীর কর্ণেল এমএজি ওসমানী। যিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন।
ইতিহাস বিবর্তনের ঝাপসা আলোয় আমরা প্রজন্মের অনেকেই রণাঙ্গনের এই অকুতোভয় সৈনিকের অসামান্য অবদান সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখিনা বা আমাদের সে সঠিক ইতিহাস থেকে বঞ্চিত রাখার চেষ্টা করা হয়। দলীয়করণের বিবর্ণ ইতিহাস একজন ওসমানীকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে না পারলেও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ আর বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানী একে অন্যের পরিপূরক। স্বাধীনতার ইতিহাসে তিনি অম্লান- অক্ষয়। বাংলাদেশের মানুষের কাছে ওসমানী একটি ভালোবাসার নাম, একটি জীবন্ত ইতিহাস।
কিংবদন্তি এই বীরকে স্বাধীনতার রচনাসমগ্র থেকে আলাদা করা যাবেনা। স্বমহিমায় উজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানী নিজের আত্মত্যাগ-সাহসী, বিচক্ষণ নেতৃত্ব দেশপ্রেমের শক্তিতে ছিলেন বলিয়ান। কঠোর নীতিবোধ, সততা ও সাহস, পরমতসহিষ্ণুতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আজীবন গণতন্ত্রী জেনারেল ওসমানী ছিলেন প্রচলিত ধারায় একজন ব্যতিক্রমী আদর্শ মানুষ। আজ এই কিংবদন্তি বীরের জন্মদিন। দিনটি নিয়ে রাষ্ট্রীয় কোনো আয়োজন না থাকলেও বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানীর অবদান খাটো হবেনা।
যে মুক্তিযুদ্ধে যে গল্প তিনি রচনা করে গেছেন নিজের অকৃত্রিম দেশপ্রেম আর সাহসী নেতৃত্ব দিয়ে, সে ইতিহাসে তাকে স্বরণ করবেই। স্বাধীন জাতির আলোকবর্তিকা কিংবদন্তি এই নায়কের জন্মদিনে কোনো আয়োজন তাকে কি পরিপূর্ণতা দিবে?

একজন ওসমানীতো জাতির ইতিহাসে অনির্বাণ হয়ে থাকবেন তাঁর সততা, নীতি- আদর্শ, নিষ্ঠা, কর্তব্যপরায়ণতা, অসীম সাহসী ব্যক্তিত্ব, ত্যাগ-তিতিক্ষা, সুদীর্ঘ সংগ্রাম ও গণতন্ত্রের প্রতি উৎসর্গীকৃত মহৎ জীবন গঠনের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি বঙ্গবীর এমএজি ওসমানী’র ১০৩ তম জন্মদিন আজ। স্বাধীনতা যুদ্ধের এই বীর সেনানী ১৯১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। পুরো নাম মুহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানী। তবে তিনি এমএজি ওসমানী নামে সর্বাধিক পরিচিত। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর অসমান্য অবদান রয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিনি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। এমএজি ওসমানীর বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে বঙ্গবীর, বীর বাহাদুর, বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করা হয়।
তৎকালীন সময়ে সুনামগঞ্জে কর্মরত ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা খান বাহাদুর মফিজুল ইসলাম ওসমানীর পিতা। যিনি পরে আসামের জেলা প্রশাসক হন। বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে ওসমানীর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে একেক সময় একেক জায়গায়। তাঁর পৈতৃক নিবাস সিলেট জেলার বালাগঞ্জ (বর্তমান ওসমানীনগর) উপজেলার দয়ামির গ্রামে। ১৯৩৪ সালে তিনি সিলেট সরকারি পাইলট স্কুল থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে মেট্রিক পাস করেন। ভর্তি হন আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং সেখান থেকে ১৯৩৬ সালে উচ্চমাধ্যমিক ও ১৯৩৮ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যয়নকালেই তিনি যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। ১৯৪১ সালে সেনাবাহিনীতে ক্যাপ্টেন এবং ১৯৪২ সালে মেজর পদে পদোন্নতি পান। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি পদোন্নতি পেয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে যোগ দেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। ১৯৫৬ সালে কর্নেল পদে পদোন্নতি পান।
এ সময় তিনি তাঁর মেধা, যোগ্যতা ও নেতৃত্ববলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত করেন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে ওসমানী দক্ষতার সঙ্গে মিলিটারি অপারেশনের উপপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালের ১৬ ফেব্রæয়ারী ওসমানী কর্নেল থাকাবস্থায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদানের মাধ্যমে ওসমানীর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ-বিশ্বনাথ আসন থেকে নির্বাচন করে জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন।
কিন্তু এই নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্থান্তর করতে টালবাহানা শুরু করলে শুরু হয় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রাম। এ সময় ওসমানী পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেয়া সব সেনা কর্মকর্তা ও সৈনিকদের সংগঠিত করে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল গঠিত হয় মুজিবনগর সরকার। এ সময় কর্নেল ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের এক ঘোষণায় কর্নেল ওসমানীকে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক পদে অধিষ্ঠিত করা হয়। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭১ সালের ২৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার কর্নেল ওসমানীকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে জেনারেল পদের মর্যাদা দেয়।
১৯৭২ সালের ৭ এপ্রিল তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে আবার রাজনীতিতে আত্মনিয়োগ করেন। শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব গঠিত মন্ত্রিসভায় তিনি জ্বালানি, অভ্যন্তরীণ নৌ যোগাযোগ ও বিমান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।

১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করেন এবং বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বিশ্বনাথ আসন থেকে বিজয়ী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
কিন্তু পরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সরকারের সঙ্গে ওসমানীর মতদ্বৈধতা দেখা দিলে ১৯৭৪ সালের মে মাসে তিনি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন এবং ১৯৭৫ সালে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে জাতীয় সংসদে বাকশাল ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হলে জেনারেল এম এ জি ওসমানী জাতীয় সংসদের সদস্য পদ এবং একই সঙ্গে দলীয় সদস্য পদ ত্যাগ করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেন।

১৯৭৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি জাতীয় জনতা পার্টি নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। ৭৮ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে গণঐক্যজোটের প্রার্থী হিসেবে এবং ৮১ সালে জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদন্বন্ধিতা করেন।
জাতি সেই দুই নির্বাচনে তাঁর সেই পরাজয়কে মনে রাখেনি, মনে রেখেছে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের এক আপসহীন যোদ্ধার কথা। এরপর ১৯৮২ সালে লে. জেনারেল হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ সামরিক আইন জারি করার পর তিনি উল্লেখযোগ্য কোনো রাজনৈতিক কর্মকান্ডে নিজেকে আর জড়াননি। জেনারেল ওসমানী জীবনের শেষ দিনগুলোতে নানা রোগে আক্রান্ত হন।

৮৩ সালের ডিসেম্বরে চিকিৎসার জন্য যান লন্ডনে। আর এই যাত্রাই হলো তাঁর শেষ যাত্রা। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক,অসম সাহসী সমর সেনা, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতি আজীবন শ্রদ্ধাশীল জাতীয় দুর্যোগ মুহূতেূর ত্রাণকর্তা জেনারেল এম এ জি ওসমানী ৬৬ বছর বয়সে ১৯৮৪ সালের ১৬ ফেব্রæয়ারী লন্ডনের একটি হাসপাতালে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪ টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বাংলাদেশের মানুষ শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে চিরদিন মনে রাখবে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানীকে।

লেখক: প্রধান সম্পাদক নোঙর টিভি

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© 2020 Nongartv.com . Design & Development by PAPRHI
Theme Customization By Freelancer Zone