একুশে পদকপ্রাপ্ত গণমানুষের কবি দিলওয়ারের ৮৫তম জন্মদিন আজ ১লা জানুয়ারি। ১৯৩৭ সালে সিলেট শহরের সুরমা নদীর দক্ষিণ পারে অবস্থিত ভার্থখলা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণা দানকারী বহু কবিতা ও গানের স্রষ্টা একুশে পদকপ্রাপ্ত এই কবি ২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
স্বাধীনচেতা ও সংগ্রামী জীবনের অধিকারী ছিলেন কবি দিলওয়ার। তিনি গ্রিক, রোম থেকে শুরু করে পুরাণকে তৃতীয় দৃষ্টির আলোকে প্রকাশ করেছেন তাঁর কবিতায়। জীবনধর্মী ইতিহাসবোধের কারণে তিনি প্রাগৈতিহাসিক কালকে টেনে আনেন তাঁর লেখনীতে। তিনি লিখেছেন, ‘সেই আদি অকৃত্রিম আকাশের নিচে/ ধূলো বালি ঘাসের ওপরে/ আমি আছি, সেই আমি জন্ম পরম্পরা থেকে/ যে আমি এখন মানুষ!’
উল্লেখ্য- কবি দিলওয়ারের ‘তুমি রহমতের নদীয়া, তুমি রহমতের নদীয়া/দোয়া কর মোরে হযরত শাহ জালাল আউলিয়া।’ এই গান দিয়ে সিলেট রেডিও’র উদ্বোধন করা হয়। এই গানটি সিলেটের সকল শ্রেণীপেশার মানুষের কাছে এক সময় বহুল প্রচারিত ও জনপ্রিয় ছিল।
তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘জিজ্ঞাসা’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৩ সালে। প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘ঐক্যতান’, ‘পূবাল হাওয়া, ‘উদ্ভিন্ন উল্লাস, ‘বাংলা তোমার আমার’, ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’, ‘বাংলাদেশ জন্ম না নিলে’ উল্লেখযোগ্য। ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ ও ২০০৮ সালে একুশে পদক পান এই কবি। এছাড়া লাভ করেছেন অসংখ্য সম্মাননা ও পদক। দীর্ঘ ৬০ বছরব্যাপী সাহিত্যের প্রায় সকল বিষয় নিয়ে লিখে গেছেন দিলওয়ার। সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা সাহিত্যকে।
‘মা-মেঘনা সুরমা যমুনা গঙ্গা কর্ণফুলী, তোমাদের বুকের আমি নিরবধি গণমানবের তুলি’ নিজের আত্মপরিচয়কে এভাবেই তুলে ধরেছিলেন কবি দিলওয়ার। সিলেটের প্রাণ ইতিহাস-ঐতিহ্যের অন্যতম সাক্ষী লর্ড ক্বিন কর্তৃক নির্মিত ক্বিনব্রিজকে নিয়ে লিখেছিলেন ‘ক্বিন ব্র্রিজের সূর্যোদয়’। তাঁর কবিতায় স্বত:স্ফূর্তভাবে উঠে এসেছে সাধারণ মানুষের কথা। আর এ জন্যই সিলেটের মানুষের কাছে তিনি ‘গণমানুষের কবি’।
Leave a Reply