1. sylpe2019@gmail.com : Nongartv :
  2. regularmd@gmail.com : Suhag Rana : Suhag Rana
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৫০ অপরাহ্ন

মানবজীবনে মনিষীদের প্রভাব- মোহাম্মদ আব্দুল হক

নোঙর টিভি ডেস্ক
  • আপডেটের সময় শুক্রবার, ৪ জুন, ২০২১

মোহাম্মদ আব্দুল হক-
আমাদের সমাজে এবং দেশ ও জাতি ছাড়িয়ে সারাবিশ্বের বিভিন্ন জাতির মাঝে বিভিন্ন ভাষাভাষী জ্ঞানী মানুষেরা অনেক সুন্দর রচনা, অনেক গুরুত্বপূর্ণ বাণী বা কথা বলেছেন যা যুগযুগ ধরে আমাদের সকল সমাজে নানান রকম পরিস্থিতিতে আমাদেরকে প্রভাবিত করেছে। আজও মনীষীদের বাণী আমাদেরকে প্রভাবিত করে। এসব বাণীর গুরুত্ব রয়েছে। আমাদের সমাজে যারা জ্ঞানী ও গুণীজন আছেন, তাঁদেরকে আমাদের ভবিষ্যত পৃথিবীর সন্তানদের জন্যে আমরা তুলে আনি আমাদের সম্মুখে। তাঁরা কতো কথা বলে গেছেন সত্যের জন্যে সুন্দরের জন্যে আর মানুষের মঙ্গলের জন্যে। পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ। কিন্তু সবখানেই দেখতে পাওয় যায় অধিকাংশের চিন্তা কেবল খেয়ে-দেয়ে দিন যাপন করা। খাদ্য গ্রহণ পর্বের খাদ্য হজম শেষে মল ত্যাগ আর মূত্র ত্যাগ করেই আবার খাদ্য ভক্ষণের নেশায় মেতে ওঠে অধিকাংশ মানুষ, যা মাঠে চরানো গরু ছাগল ও মহিষে লক্ষ করা যায়। অথচ মানুষের আছে সকল প্রাণীর চেয়ে উন্নত মস্তিষ্ক যা কাজে লাগিয়ে সে জীবনকে সকল মানুষের উপকারে লাগাতে পারে। এই পৃথিবীতে কতো অজানাকে জানার সুযোগ আছে। সুন্দরকে উপভোগ করার সুযোগ আছে। চিন্তা ও ধ্যানে অর্জিত জ্ঞানের দ্বারাই এ সুযোগ সৃষ্টি করে উপভোগ্য করে তোলা যায়। অজানাকে জানা এবং নিজেকে জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করার কাজতো অন্য প্রাণী করবেনা। মানুষ-ই জ্ঞান সাধনা করে। অন্যান্য প্রাণীরা কেবল ছুটে বেড়ায় খাদ্য সংগ্রহের তাগিদে। জলে স্থলে আর বৃক্ষের উঁচু শাখায় কিছু হিংস্র প্রাণী আছে যারা কেবলই ছিনিয়ে নিয়ে ভক্ষণ করে। মানুষ উন্নত প্রাণী। মানুষ অন্যান্য পশু-পাখিদের মতো আচরণ করলে তার গৌরবের কিছুই থাকেনা। তাইতো মানুষ যুগে যুগে মনীষীদের দেখানো পথে হেঁটে হেঁটে পাশবিকতা থেকে মুক্ত থাকতে শিখেছে, হয়েছে মানবিক, হয়েছে শ্রেষ্ঠ প্রাণী।

মানব জাতির পথ প্রদর্শক রূপে সৃষ্টিকর্তা মনীষীদেরকে মানুষের মাঝে পাঠিয়ে দেন। অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়।’ তাঁর এই বাণীটি আমাদেরকে সুন্দর ও ভালো স্বপ্ন দেখতে অনুপ্রাণীত করে। তখনই মানুষ জ্ঞান সাধনা করে আরো বড়ো হতে চায়। জ্ঞান সাধনায় মানুষ জেনেছে অনেক অজানা রহস্য। এমন কাজে আমাদেরকে ঋণী করে গেছেন যুগে যুগে পৃথিবীতে আসা জ্ঞানী গুণীজন। পৃথিবীতে জ্ঞানী মানুষের সংখ্যা সবযুগেই কম। তবে জ্ঞানী মানুষ আসেন সবসময় সব গোত্রে এবং বলে যান কথা। যারা বুঝে তারা পায়, যারা বুঝেনা তারা পায়না। অনেকে আবার গোঁয়ার, বুঝতে চায়না। এদেরকে বেশি বুঝাতে গিয়ে অতীতে মনীষীগণ খুব অপমান সয়েছেন, কষ্ট পেয়েছেন বটে ; তবে বিনিময়ে সম্মানিত আসন পেয়েছেন মানুষেরই মাঝে জীবনে ও মৃত্যুর পরেও। যারা জ্ঞানকে অবজ্ঞা করেছে তারা সময়ে হারিয়ে গেছে। জ্ঞান বহন ও ধারণ খুবই কঠিন কাজ। এ-তো খুবই ভারী বস্তু, সৃষ্টিকর্তা সকলকে এমন জ্ঞান ধারণের সামর্থ্য দান করুন। এ যে খুবই প্রয়োজন। চারিদিকে দেখি মানুষের বেশে হায়েনাদের উল্লম্ফন। ‘সুবচন সুখ্যাতি মানুষেরই হয়/ কুবচন কুখ্যাতি অমানুষে বয়।’

মানুষকে পড়তে হয় প্রচুর এবং এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হয় সারাজীবন। প্রকৃতির কাছ থেকেও পাঠ নেয়া যায় এবং শেখা যায়। আমাদের এখানে দশ-বারো ক্লাস শিক্ষা পাস দিয়ে অনেকে ভাব নেয় জ্ঞানী হয়ে গেছে। কিন্তু চাই জ্ঞান নির্ভর শিক্ষা। সারাজীবন জানার আগ্রহ থেকে পড়তে হবে, খুঁজতে হবে। শেলী যথার্থই বলেছেন, ‘আমরা যতোই অধ্যয়ন করি ততোই আমাদের অজ্ঞানতাকে আবিষ্কার করি।’ আমাদের মায়েদের আরো বেশি বেশি পড়তে হবে। আমাদেরকে বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণি পাস করেও বইয়ের সাথে সংশ্লিষ্টতা রাখতে হবে। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেন, ‘তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দিবো।’ এখানে জ্ঞান-নির্ভর শিক্ষার গুরুত্বের কথা বুঝানো হয়েছে। আমাদের সামনে প্রতিনিয়ত সাধারণ জৈবিক চাহিদা সংক্রান্ত সমস্যার পাশাপাশি জীবন ঘনিষ্ঠ জটিল সমস্যা এসে যায়, এসকল সমস্যা মোকাবেলায় অবশ্যই আমাদেরকে ভাবতে হয়। এই ভাবনার ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষ উদাসীন থাকে। তবে কেউ কেউ গভীর চিন্তামগ্ন হয় এবং জীবন নিয়ে ভাবে। একসময় আমরা চিন্তালব্ধ জ্ঞান দ্বারা একটি সমস্যা থেকে বের হই। কিন্তু একেবারেই মুক্তি মিলেনা। আবার সামনে চলে আসে আরেক সমস্যা। মননশীল ও চিন্তাশীল মানুষ একটির পর একটি সমস্যা নিয়ে ভাবেন, সমাধান খুঁজে পান এবং আবার নতুন করে সামনে চলে আসা সমস্যা নিয়ে ভাবতে থাকেন। তাঁরা মনীষী। এভাবেই মানুষের জন্যে সারা জীবন জ্ঞানচর্চা করেন এবং পথ দেখান।

সমস্যা আমাদের পিছু ছাড়বে না। জীবন যতোদিন সচল একের পর এক সমস্যা আপনার সামনে আসবে। এসব জয় করার জন্য আপনাকে ভাবতে হবে। ভাবনার জগতে ঢুকে গভীর মনোযোগী হলেই দেখবেন নতুন পথের সন্ধান পেয়ে গেছেন। মজার এক জগত। আপনি শিখেছেন, জেনেছেন, বুঝেছেন এবং উপলব্ধি হয়েছে। তাই আপনি জ্ঞান চর্চায় মনোনিবেশ করেছেন। আপনার এমন জ্ঞানালোক সকলের চোখে সইবেনা এবং আপনার কথা সবার হজম হবেনা। তাই বলে আপনি ওই স্তর থেকে নামবেন কেন? উপরে উঠলে নিচে থেকে কেউ কেউ হিংসায় জ্বলে ঢিল ছুঁড়বে আবার আলোক দেখেও কেউ কেউ অন্ধকারে থেকে আলোর দোষ খোঁজে বেড়াবে। যে জানার সে ঠিক-ই জানে যে, উপর-তো উপর-ই, আলো-তো আলো-ই। শেখ সাদী বলেন : –
‘আলো দেয় পৃথিবীতে সূর্যের-ই কিরণ/খারাপ লাগে চামচিকার আলোকিত করণ।’

এর ব্যাখ্যা হলো : ‘জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা শত্রুর কাছে বড়ো দোষের বিষয়। পৃথিবীকে সূর্য আলো দান করে ; কিন্তু চামচিকার চোখে তা খারাপ লাগে।’ ( ব্যাখ্যা কবি মাহমুদুল হাসান নিজামী)। হয়তো এজন্যেই আলোর পথে চলতে বললে কিংবা জ্ঞানের কথা ধৈর্য্য ধরে শুনতে বললে, অনেকেই তা সহ্য করতে পারেনা। অথচ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনীষী মহানবী হযরত মুহম্মদ সা. এর এক হাদিস অনুসারে, মহান আল্লাহ প্রথম যে জিনিসটি সৃষ্টি করেছেন তা হচ্ছে জ্ঞান। খাদ্য সংগ্রহ ও টাকা আয়-রোজগার এবং সম্মান নিশ্চয় দুর্নীতি করে অন্যের ক্ষতি করে অর্জন করার কথা আল্লাহ্ ও আল্লাহর রাসূল বলেন নি। এটা বুঝার জন্যে জ্ঞানের প্রয়োজন।।

 

লেখক- কবি ও প্রাবন্ধিক

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© 2020 Nongartv.com . Design & Development by PAPRHI
Theme Customization By Freelancer Zone