সমাজ জীবনে যখন বিশৃঙ্খলা উত্তরঙ্গ, কুসংস্কার ও বিচিত্রতার অশুভ প্রেত নৃত্য যখন চতুর দিক আচ্ছন্ন, পরিবেশ যেখানে বিষাক্ত, কলুষিত, মানুষে মানুষে বিভেদ-বিভাজন,দ্বন্দ্ব কলহ,জীবনের সর্বক্ষেত্রই অবক্ষয়ের লক্ষণ সুষ্ঠপথ অজ্ঞানতার তামাসিকতায়।
মানুষ যখন সুপ্তিমগ্ন দিশেহারা তখনই আদর্শ ভ্রষ্ট মানুষকে হতাশা থেকে, রুদ্ধশ্বাস, অসহায় অবস্থা থেকে মুক্ত করার জন্য অনুপ্রেরণার বাতিঘর হয়ে ধরাধামে আবির্ভূত হয় কেউ কেউ।
তাদের আগমনে সত্যের জ্যোতিতে অন্ধকারাচ্ছন্ন পথিকের জীবন হয় উচ্ছ্বসিত।দেবদূতের মত আবির্ভূত হওয়া মানুষটির আদর্শ, অনুপ্রেরণা, সাহস আর মনোবল সত্যদৃষ্টি ভ্রষ্ট, ভ্রান্ত পথের বিভ্রান্ত পথিককে করে উজ্জীবিত।
নিত্য-নতুন সৃষ্টিশীল কাজে কল্যাণবোধে করে উদ্দীপ্ত।
পৃথিবী সৃষ্টিলগ্ন থেকে কিছু মানুষের অনুপ্রেরণা নিরঙ্কুশ সহযোগিতায় অসহায়, দুর্বল, পথভ্রষ্ট মানুষ খুঁজে পেয়েছে অন্ধকারে আলো, হতাশায় আশ্বাস,দুঃখে শান্তনা।
পৃথিবী সৃষ্টির প্রথম প্রভাত থেকে আজকের দিন পর্যন্ত প্রতিটি মানুষের ইতিহাস বয়ে চলছে অসংখ্য ঘাত-সংঘাত, চড়াই-উৎরাই এবং উত্থানপতনের মধ্য দিয়ে।
চাওয়া-পাওয়ার জটিল সমীকরণে প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির সমন্বয়হীনিতা অনেক জীবন করে তুলে দূর্বিসহ।
আমরা না চাইতেই পেয়ে যাই অনেক কিছু, আবার পেয়ে হারাই।
জীবন প্রবাহমান নদীর মতো অচেনায় বয়ে চলা।অচেনাকে চিন্তেই কেটে যায় অনেক গুলো বসন্ত।
জীবনের এই পথচলায় অনেক মানুষের সাথেই আমাদের পরিচয় হয় কেউ কেউ আসে আশির্বাদ হয়ে কেউ বিপরীত।
জীবনের পথধরে হাটতে হাটতে হঠাৎ করে এমন কিছু মানুষের আগমন ঘটে আমাদের জীবনে যারা অন্ধকার বিভীষিকাময় পথে দ্বীপশিখা হয়ে এসে অন্যের ভিতর লুকিয়ে থাকা প্রতিভাকে জাগিয়ে তুলতে প্রচেষ্টা করেন।
প্রতিভা স্রষ্টার অলৌকিক দান, অনাদরে-অযত্ন আর অবহেলায় যখন সৃষ্টিশীল প্রতিভা ভিতরেই মরে যেতে উদগ্রীব তখন স্রষ্টাই হয়তো কোনো আদর্শ মানুষকে পাঠিয়ে দেন নিজের ভিতর লুকিয়ে থাকা প্রতিভাকে প্রাণসঞ্চার করতে।
জীবন চলার পথে এমনই একজন মানুষ আমি পেয়েছি যারা অকৃপন সমর্থন- সহযোগিতা অকৃত্রিম ভালোবাসায় নিজেকে আবিস্কার করতে পেরেছি ভিন্ন আঙ্গিকে।
সেই প্রিয় মুখটি আমাদের সকলের অতি পরিচিত গল্পকার, সাংবাদিক, সংগঠক, কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ এর সাবেক সহ-সভাপতি সেলিম আউয়াল।
গল্পকার সেলিম আউয়াল ভাইকে চিনতাম একজন সাংবাদিক হিসেবে, তখনো তেমন পরিচয় ছিলোনা ২০১৬ সালে ১২ ফেব্রুয়ারী সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বইমেলা চলাকালীন সময় প্রথম উনার বই এর সাথে পরিচয় হয়।
”মরা গাঙে জল” নামে উনার গল্পের বইটি অটোগ্রাফ সহ সংগ্রহ করি সেদিন।
এরপর আর যোগাযোগ ছিলোনা চলার পথে প্রায়ই দেখা হতো কিন্তু কথা হয়নি সময়ের ব্যস্ততায় নয়তো আমার ব্যর্থতা।
কেমুসাসে যাওয়ার পর প্রথম উনার সাথে একদিন দীর্ঘ আলোচনা হয় মুলত সেদিন থেকেই তিনি আমার পথপ্রদর্শক হয়ে আছেন।
সেদিনের ঘুমটা ভাঙে প্রিয় সেলিম আউয়াল ভাই’র ফোন কলে।
ফোন রিসিভ করতেই উনার সাথে দেখা করার কথা বলেন আর আমিও ঝটপট রেডি হয়ে ছুটে গেলাম দেখা করতে।
কারণ জানতাম উনার কাছে গেলে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হতে পারবো।
সেদিন দীর্ঘক্ষণ আলাপ আলোচনা করে জ্ঞান আহরণ করলাম।
বন্ধুবর সাংবাদিক, সংগঠক এমজেএইচ জামিল তালুকদারের মুখে সেলিম আউয়াল ভাই’র প্রশংসা সব সময় শুনি,জামিলের সাংবাদিকতার গুরু এই মানুষটি,উনার হাত ধরেই জামিল আজ প্রতিষ্টিত একজন সাংবাদিক কাজ করেছে আমার দেশ পত্রিকা সহ অনেক জাতীয় এবং স্থানীয় দৈনিকে।বর্তমানে সে কর্মরত সিলেটের বহুল প্রচারিত দৈনিক জালালাবাদ পত্রিকায়।
সিলেটের অনেক তরুণ লেখকের মুখে শুনেছি সেলিম আউয়াল ভাই সব সময় তরুণদের উৎসাহ উদ্দীপনা যোগান,সুযোগ করে দেন তারুণ্যকে মেধার বিকাশ ঘটাতে।
তারুণ্যকে অনুপ্রেরণা দিয়ে সৃষ্টিশীল কাজে মনোনিবেশ করতে বলেন।
নিজে আড়াল থেকে ছায়া দিয়ে পথ তৈরি করে দেন নিজের অবস্থান গড়ে নিতে। সেদিন আমাকেও অনেক শিক্ষণীয় উপদেশ,প্রেরণা, শক্তি যোগালেন।
সাহিত্যে আমি অনুপ্রবেশকারী,লিখালিখি ছিলো আমার আত্মার খোঁড়াক, যখন যা মাথায় আসতো লিখে ফেলতাম, এভাবেই পথচলা।আমার জীবনের ভুলগুলোর মধ্যে একটি ছিলো সাহিত্য থেকে দূরে থাকা,স্কুল জীবনে মাসিক একটি সাহিত্য ম্যাগাজিনে কবিতা দিয়ে আমার লিখালিখির পথচলা শুরু।
এরপর অনেক সাময়িকী, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, দৈনিক পত্রিকায় লিখা ছাপা হয়েছে কিন্তু সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারিনি ।
একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবেই বড় পরিচয় ছিলো নিজের কাছে।
রাজনীতিতে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ায় সাহিত্য থেকে ছিটকে পড়ি।লিখালিখি ছিলো ফেইসবুকেই সীমাবদ্ধ।সারারাত জেগে ডায়রীর পাতায় লিখেছি অনেক কিন্তু তা প্রকাশের ইচ্ছে হতোনা কখনো,
একদিন সাহিত্যপ্রেমী-রাজনীতিবিদ সালেহ আহমদ খসরু ভাই’র পরামর্শে সেলিম আউয়াল ভাই’র সাথে আমার বই প্রকাশের ব্যাপারে আলোচনা করার জন্য দেখা করি।
সেলিম আউয়াল ভাই সিলেটে সাহিত্যের সূতিকাগার কেমুসাসে (কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ) নিয়মিত অংশ নেওয়ার জন্য বলেন।
মুলত সেলিম আউয়াল ভাই এর অনুপ্রেরণা আর সহযোগিতায় কেমুসাস এবং সিলেট মোবাইল পাঠাগার সাহিত্য আসরের নিয়মিত একজন হয়ে উঠি।ভীষণ উপভোগ্য প্রতিটি সাহিত্য আড্ডা।
সাহিত্য আসরে গিয়ে নিজেকে নতুন ভাবে আবিস্কার করি।
শিখতে লাগলাম নতুন করে অনেক কিছু।
আমার সামাজিক কাজকর্ম, আগ্রহ, অদম্য ইচ্ছা শক্তি দেখে সেলিম আউয়াল ভাই প্রতিনিয়ত আমাকে উৎসাহ যোগাতে থাকেন তারই ধারাবাহিকতায় সেদিন দীর্ঘ সময় আমাকে বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করার অনুপ্রেরণা, উৎসাহ,দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
আমিও সেদিন উনার প্রতিটি কথা মনে নিয়ে নতুন করে ভালো কিছু করার উদ্দীপনা পেলাম ।
উনার মত বিদগ্ধজনের সাহচর্য পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে হয়েছিলো সেদিন।
তখন উপলদ্ধি করলাম তারুণ্যের মেধা,শ্রম,বুদ্ধি-বিবেক, মনুষ্যত্বকে কাজে লাগাতে সেলিম আউয়ালদের মতো যদি সবাই অনুপ্রেরণা যোগাতো এই দেশে অগণিত নক্ষত্র জ্বলে উঠতো।
আপন আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে আলোকিত করতো ধরিত্রী।
সেলিম আউয়াল ভাই’র কথা মেনে চলার জন্য সামর্থ্য’র সবটুকু দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে নব উদ্দামে সাহিত্য অঙ্গনে প্রবেশ করে লিখালিখার প্রতি ঝোঁক বাড়িয়ে দিলাম।
বুঝলাম বই প্রকাশে আরও সময় নেওয়া প্রয়োজন নিজের লিখনশৈলী আরো শানিত করতে হবে।
কেমুসাস ও সিলেট মোবাইল পাঠাগারে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতাম নিজের লিখনীকে আরও শক্ত করতে।
এভাবেই কেটে গেলো কয়েক মাস রপ্ত করলাম অনেক কলাকৌশল।
সেলিম আউয়াল ভাই প্রতিনিয়ত উৎসাহ, অনুপ্রেরণা দিক নির্দেশনা দিতে লাগলেন অবিরাম।
কি ভাবে কি করতে হবে, কি করলে ভালো কি মন্ধ সব বিষয়ে দেখভাল করতেন তিনি।সাহিত্য আসরে দেখা হলেই বলতেন দৈনিক দুই ঘন্টা পড়তে হবে লিখতে হবে।
সেলিম আউয়াল ভাই’র কাছ থেকে শিখেছি তিনটি জিনিস, পড়তে হবে,লিখতে হবে আর লিখাগুলো সংরক্ষণ করতে হবে।
আমার কাজ করার মন মানসিকতাআর উনার সঠিক দিক নির্দেশনা আজকে সাদামাটা একটা অবস্থান করে দিয়েছে সাহিত্যে সেটা অকপটে স্বীকার করে নিতে হয়।
এভাবেই চলছিল দিনক্ষণ সাহিত্যের সাথে সখ্যতা প্রকট হয়ে গেলো,
ডিসেম্বর মাস তখন শেষের দিকে নিজের মধ্যে ইচ্ছে পোষণ করলাম লিখনীগুলোকে একটা পাণ্ডুলিপিতে জায়গা দিলে মন্ধ হয়না, তখন দরজায় কড়া নাড়ছে একুশে বইমেলা তাকেই মুখ্য সময় ধরে নিলাম।বইমেলার সুযোগটা কাজে লাগাতে চাইলাম।
আবারও প্রথমে আলোচনা করলাম আরেক অনুপ্রেরণার উৎস, যিনি সব ভালো কাজেই অকুণ্ঠ সমর্থন করেন সাহিত্যপ্রেমী সালেহ আহমদ খসরু ভাই’র সাথে, দুজনে পরামর্শ করে গল্পকার সেলিম আউয়াল ভাইর সাথে বিশদ আলোচনা করে প্রথম গ্রন্থ প্রকাশে হাত দেই।
এগিয়ে আসেন সেলিম আউয়াল ভাই নিজের প্রকাশনা প্রতিষ্টান কৈতর প্রকাশনা থেকেই বই প্রকাশের উদ্যোগ নেন শুরু হলো স্বপ্নের বাস্তব রুপান্তরের প্রক্রিয়া।
পাণ্ডুলিপি জমা দেই সেলিম আউয়াল ভাই’র কাছে, একটা প্রচ্ছদও পছন্দ করে দেন তিনি,ফাইনাল প্রুফ দেখে ছাপাখানায় যায় আমার প্রথম কাব্য জ্যোতি।
১লা ফেব্রুয়ারি সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরু হবে একুশে গ্রন্থমেলা তার আগেই বই হাতে পৌছে যায়।
সেলিম আউয়াল ভাই’র সাথে আলোচনা করে প্রকাশনা অনুষ্টানের দিন ধার্য্য করে উনার পরামর্শ নিয়ে কিভাবে অনুষ্টান সফল সুন্দর করা যায় তা ঠিক করি।
২ জুন সন্ধ্যায় কেমুসাসের সাহিত্য আসরে মোড়ক উন্মোচন অনুষ্টিত হয়।
কৈতর প্রকাশনীর আয়োজনে সেই মোড়ক উন্মোচন অনুষ্টানে সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি আমার সামাজিক কাজ-কর্ম সাহিত্য সব বিষয়ে আলোচনা করে আমাকে আবেগ আপ্লুত করে ফেলেন।
আমার প্রথম কাব্য জ্যোতি প্রকাশনা অনুষ্টানে মোড়ক উন্মোচক ছিলেন সিলেটের সাহিত্য অঙ্গনের দিকপাল প্রথিতযশা কবি কালাম আজাদ ভাই, বক্তব্য রাখতে গিয়ে কালাম আজাদ ভাই নতুনদের নিয়ে কাজ করায় সেলিম আউয়াল ভাইকে মানষসখা হিসেবে আখ্যায়িত করেন।সিলেটের তরুণ লেখক সমাজকর্মীদের নিয়ে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন সকলের প্রিয়ভাজন গল্পকার সেলিম আউয়াল ভাই।
কবি কালাম আজাদ ভাই যথার্থই বলেছেন সেলিম আউয়াল ভাই সত্যি মানসসখা, অনেক প্রতিভা বিকশিত হয়েছে উনার হাত ধরেই।
তিনি এখনো আমাকে প্রতিনিয়ত প্রেরণা সাহস সহযোগিতা করে যাচ্ছেন নিরলস।অনায়াসে বলতে পারি গল্পকার সেলিম আউয়াল ভাই এখন আমার প্রেরণার বাতিঘর।
উনার অনুপ্রেরণায় আমাদের সেচ্ছাসেবী সংগঠন আলোর অন্বেষণ থেকে প্রথম বইমেলা আয়োজন করি ২০১৯ সালে।
পুরো বইমেলার প্রস্তুতি আয়োজন সবকিছুতে উনি আড়াল থেকে বুদ্ধি পরামর্শ করে সহযোগিতা করেন।
ক্ষুদ্র পরিসরে বৃহৎ একটি আয়োজন কিভাবে সফল করা যায় উনার কাছ থেকেই দীক্ষা নিয়েছি।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ দিকে আমি দুবাই চলে আসি। প্রতিকুল পরিস্থিতিতে ইচ্ছের বিরুদ্ধে দেশান্তরি হতে হয়েছে,দূর প্রবাসে এসেও সেলিম আউয়াল ভাইর সাথে যোগাযোগ হয় সবসময়।
সাহিত্যের প্রতি গভীর মমত্ববোধ থেকে ২০২০ সালের ১ লা ফেব্রুয়ারীতে বইমেলার জন্য দেশে যাই এবং সেলিম আউয়াল ভাইর সাথে পরামর্শ করে ২য বইমেলার আয়োজন করি পাশাপাশি তরুণ সাহিত্যিকদের অনুপ্রাণিত করতে চালু করি আলোর অন্বেষণ সাহিত্য পুরস্কার।
এই আয়োজনেও আড়াল থেকে সকল ধরনের বুদ্ধি- পরামর্শ দিয়ে আমাদের সফল একটি অনুষ্টান করতে সাহায্য করেন তিনি।
২০২১ সালে করোনা পরিস্থিতিতে দেশে যেতে পারিনি তবুও আমাদের বইমেলা ও সাহিত্য পুরস্কারের উদ্যোগ নেই কেবল মোবাইলে যোগাযোগের মাধ্যমে।
এবার আমি সশরীরে উপস্থিত না থাকলেও সেলিম আউয়াল ভাইর সাথে সার্বক্ষনিক মোবাইলে কথোপকথনে বিরাট এক আয়োজন সফলতার মুখ দেখে।
একজন মানুষ কতটা সাহিত্যপ্রেমী হলে আড়াল থেকে তারুন্যকে উদ্দীপনা দিতে পারে ভাবা যায়।
সেলিম আউয়াল ভাইর হাত ধরে অনেক প্রতিভা বিকশিত হয়েছে, তরুণ লেখকদের পছন্দের শীর্ষে তিনি।
দেশে থাকতে আমি সময় পেলেই ছুটে যেতাম সেলিম আউয়াল ভাই’র কাছে, ভালো কিছু করার দিক নির্দেশনা নিয়ে নিজেকে আরও শানিত করতে।
এখন দূরপ্রবাসে এলেও যেকোনো বুদ্ধি- পরামর্শের জন্য সেলিম আউয়াল ভাইকে বিরক্ত করি।
সেলিম আউয়াল ভাই সম্পর্কে অনেক কিছুই লিখা যাবে,ছোটো করে উনার পরিচয়টি তুলে ধরছি পাঠকদের জন্য-
গল্পকার সেলিম আউয়াল এর জন্ম ১৯৬৪-এর ১০ জানুয়ারী সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম গৌরিপুর ইউনিয়নের খূজগীপুর মোল্লবাড়ি গ্রামে। মরহুম আবদুল ওয়াহিদ মাতা মির্জা সমরুন নেসা কুল আলো করে পৃথিবীতে নিজের অস্তিত্ব জানান দেন, জন্ম গ্রামে হলেও সেলিম আউয়ালের শৈশব-কৈশোর তারুণ্যের দিনগুলো সিলেট শহরেই কেটেছে।
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ মদন মোহন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাজীবন শুরু করেন এবং এখান থেকেই চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে গ্রাজুয়েশন লাভ করেন। দক্ষ সংগঠক হিসেবে কলেজে ছিলো সেলিম আউয়ালের তুমুল জনপ্রিয়তা,নেতৃত্ব দেওয়ার ব্যাপক গুণাবলি ছিলো বলে সেই সময় সহপাঠীদের অনুরুধে কলেজ ছাত্র সংসদের সাহিত্য সম্পাদক পদে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন। মদন মোহন কলেজ থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে আইন পেশায় সিলেট আইন কলেজে অধ্যয়ন শুরু করেন কিন্তু নানান কারণে আইন অধ্যয়নের সফল সমাপ্তি করতে না পারলেও সামাজিক সংগঠক হিসেবে সমাজকর্ম চালিয়ে যান, লিখালিখির প্রতি প্রচণ্ড ঝোক ছিলো মাধ্যমিকে থাকা কালেই ১৯৮০ সালে শিশু কিশোর যুব কল্যান সংগঠন সাইক্লোন গ্রুপ তার হাতেই প্রতিষ্টিত হয়, যা সমাজসেবা অধিদপ্তররের তালিকা ভুক্ত।
নানান পেশায় যুক্ত থাকলেও সেলিম আউয়াল সাংবাদিকতাকেই মুল পেশা হিসেবে বেছে নেন।
১৯৭৭ সালে সাপ্তাহিক কিশোর বাংলার রিপোর্টার হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করেন।এরপর কাজ করেছেন হবিগঞ্জ থেকে প্রকাশিত দৈনিক দৃষ্টিপাত পত্রিকায় সিলেট প্রতিনিধি হিসেবে,ছিলেন দৈনিক জালালাবাদ পত্রিকার ষ্টাফ রিপোর্টার, কাজ করেছেন সাপ্তাহিক সিলেটের সকাল পত্রিকায় নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে, ২০০১ সালে দৈনিক সিলেটের ডাকে প্রথম সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন এরপর দায়িত্ব পালন করেন বার্তা সম্পাদক হিসেবে।
সেলিম আউয়াল ২০০২ সালে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা বাসস এর সিলেট প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করেন।
তার হাত ধরেই যাত্রা শুরু হয় সিলেটের প্রথম অনলাইন নিউজ পোর্টাল দৈনিক সিলেট সিফডিয়া ডটকম’র (যেটা এখন সিলেট এক্সপ্রেস ডটকম নামে পরিচিত )। তিনি স্থানীয় সরকার সাংবাদিক ফোরাম সিলেট জেলা শাখার সভাপতি।
বাংলাদেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী সাহিত্য প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ কেমুসাসের সাথে যুক্ত আছেন তিনি। ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জুলাই অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভায় নতুন কমিটি ঘটিত হলে সে কমিটিতে সেলিম আউয়াল সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।এরপর কেমুসাসে দায়িত্ব পালন করেছেন সাহিত্য সংস্কৃতি সম্পাদক,সহ সাধারণ সম্পাদক, সহ সভাপতি পদে।
১৯৯৬ সালে থেকে অদ্যাবধি ২০ বছর যাবৎ তিনি কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাথে সম্পৃক্ত।
সেলিম আউয়াল দেশের প্রাচীনতম সাহিত্য সাময়িকী আল ইসলাহ’র সম্পাদক হিসেবেও সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
গল্পকার হয়ে উঠার আগে সেলিম আইয়াল মুলত ছড়া দিয়ে লেখালেখির জগতে পা রাখেন।
পরবর্তীতে দেশের ইতিহাস ঐতিহ্যকে তুলে ধরার কাজ শুরু করে কথাসাহিত্যে পদচারনা।চমৎকার করে দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য,কৃষ্টি-সংস্কৃতি, ভ্রমন কাহিনী লিখে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন সাহিত্য জগতে।
২০০১ সালে সাপ্তাহিক রোববারের ঈদ সংখ্যায় সেলিম আউয়াল কুকুরের লাশ শিরোনামে একটি উপন্যাস লিখেন যেটা পরবর্তীতে ঢাকার মৌলি প্রকাশনী ‘যুবতীর লাশ’ নামে প্রকাশ করে।২০১২ সালের কেমুসাস বইমেলায় যুবতীর লাশের ২য় সংস্করণ বের করে পানশী।
এখন পর্যন্ত সেলিম আউয়াল’র প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১১টি সর্বশেষ কৈতর প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে গ্রন্থ সমালোচনা “বই নিয়ে বই”।
এছাড়াও সেলিম আউয়াল মরমী কবি হাসন রাজাকে নিয়ে লিখেছেন ” গানের পাখি হাসন রাজা এবং তাঁর পুত্র দৌহিত্র প্রপৌত্র কথা।
সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক বশির উদ্দিন’র জীবনী নিয়ে লিখেছেন সাংবাদিক সংগঠক মোহাম্মদ বশির উদ্দিন শিরোনামে।
পবিত্র মক্কার ভ্রমন কাহিনী নিয়ে লিখেছেন “আবাবিল হয়ে চুমু দিয়ে যাই” লিখেছেন ধ্যানী গবেষক সৈয়দ মোস্তফা কামাল এর জীবনী গ্রন্থ।ভ্রমনকাহিনী চ্যাঙের খালে ব্যাঙের ফাল,অন্ধকারে দাড়িয়ে বেদারুদ্দিন স্যার কবিতা শুনেন,সিলেট বিষয়ক লেখাজোকা, ছোটগল্প মরা গাঙের জল সেলিম আউয়ালের উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত গ্রন্থ।
চার ভাই দু‘বোনের মধ্যে সেলিম আউয়াল সবার বড়। উনার ছোট দুই ভাইও সাংবাদিকতার সাথে সম্পৃক্ত, ছোট ভাই আব্দুল বাতিন ফয়সল সিলেট ফটো জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশান’র সভাপতি কনিষ্ঠ ভাই দিদার আলম কাজ করছেন সিলেট সুরমা টিভিতে।
সহধর্মিনী আফিয়া সুলতানা একজন গৃহিণী । কন্যা নাদিরা নূসরাত মাসিয়াত সিলেট ওমেন্স মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পাস করেছেন এবং একমাত্র পূত্র জুন্নুরাইন ক্বদর স্কলারস হোম স্কুলের শিক্ষার্থী।
Leave a Reply